ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকিয়ে ছুটছে অটো

সিএনজি চালিত অটো চালু হওয়ার খবর শুনে এক সময়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন শহরবাসী। মিনিবাস যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। অটো চলায় সরাসরি দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে, আশা করেছিলেন তাঁরা। রাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যাও মিটবে বলে মনে করেছিল দুর্গাপুর। কিন্তু, সেই আশা মেটেনি। উল্টে, অটো নিয়েই এখন বিস্তর অভিযোগ শহর জুড়ে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:২৬
Share:

মিটার না থাকা এই সব ট্যাক্সিও যেমন খুশি ভাড়া চায় বলে নালিশ যাত্রীদের।

সিএনজি চালিত অটো চালু হওয়ার খবর শুনে এক সময়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন শহরবাসী। মিনিবাস যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। অটো চলায় সরাসরি দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে, আশা করেছিলেন তাঁরা। রাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যাও মিটবে বলে মনে করেছিল দুর্গাপুর। কিন্তু, সেই আশা মেটেনি। উল্টে, অটো নিয়েই এখন বিস্তর অভিযোগ শহর জুড়ে। এই পরিস্থিতিতে প্রি-পেড ট্যাক্সি খানিকটা রেহাই দিতে পারে বলে শহরের অনেকের ধারণা। যদিও তা চালুর আশু কোনও সম্ভাবনার কথা শোনা যায়নি পুরসভার কাছে।

Advertisement

দুর্গাপুরে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৮ সালে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, শহর থেকে পেট্রোল চালিত অটো তুলে দেওয়া হবে। চালু হবে সিএনজি চালিত অটো। তাতে এক দিকে যেমন পরিবেশের উপকার, তেমনই এই জ্বালানির দাম তুলনায় কম হওয়ায় অটো চালকদেরও লাভ। বরাকর ও বার্নপুরের দামোদর উপত্যকায় কুয়ো খুঁড়ে কোল বেসড মিথেন তুলে তা সিএনজি-তে রূপান্তর করে দুর্গাপুরে সরবরাহের দায়িত্ব নেয় একটি বেসরকারি সংস্থা। প্রথম দফায় চালু হয় ৮০টি সিএনজি চালিত অটো। ধাপে ধাপে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন শহরে অটো প্রায় হাজার। তিনশো চলে গ্রামীণ রুটে। বাকি শহরের ৫০টি রুটে।

কিন্তু সঙ্কট কাটেনি। অভিযোগ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরে প্রায় সব চালু রুট থেকেই অটো উধাও হয়ে যায়। সে সিটি সেন্টার হোক বা দুর্গাপুর স্টেশন। অটোচালকদের দাবি, সিএনজি-র দাম বেড়েছে। বেড়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম। ব্যাঙ্কে কিস্তির টাকা মেটাতে হয়। সন্ধ্যার পরে পর্যাপ্ত যাত্রীও মেলে না। কাজেই বেশি রাত পর্যন্ত অটো চালিয়ে পোষায় না।

Advertisement

গত কয়েক বছরে অটো চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের সঙ্গে দুব্যর্বহারের অভিযোগও উঠেছে। গত জুনে ডিএসপি টাউনশিপের জেএম সেনগুপ্ত রোডে ট্রাফিক আইন ভেঙে এক মোটরবাইক আরোহীকে ধাক্কা মারে একটি অটো। মোটরবাইক চালক প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর ও গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। দিন কয়েক পরে সিটি সেন্টারের একটি সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় অটোর ধাক্কায় জখম হন মোটরবাইক আরোহী ও তাঁর বান্ধবী। অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় সেই অটোর চালক ফোন করে অন্য কয়েক জন অটো চালককে ডেকে তাঁদের মারধর করে। বাঁচাতে গিয়ে জখম হন স্থানীয় এক যুবক। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘দুর্গাপুর সিএনজি অটো অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সহ-সভাপতি শান্তনু সোমের দাবি, অটোচালকেরা আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় যান। দু’টিই বেআইনি। অটোচালকদের সচেতন করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বেশি যাত্রী তোলার অভিযোগও রয়েছে অটোর বিরুদ্ধে।

অটো নিয়ে আরও অভিযোগ রয়েছে। বহু রুটেই অটো চলে না। চললেও অনিয়মিত। রুটে না চালিয়ে চড়া ভাড়া নিয়ে ‘রিজার্ভ’ যেতেই বেশি উৎসাহ। বহু অটোয় আবার রুটের উল্লেখও নেই। দেখে বোঝার উপায় নেই, কোন রুটে সেগুলি চলে। সরকারি নিয়মের বাইরে অটোয় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত দু’তিন বছরে বেআইনি অটোর রমরমা বেড়ে গিয়েছে। দুর্গাপুরে অন্তত শ’দেড়েক অটো চলছে পারমিট ছাড়াই। এক-এক জনের হাতে একাধিক অটো এবং রুটের অনুমোদন রয়েছে। মূলত চড়া ভাড়ায় ‘রিজার্ভ’-এর জন্যই অতগুলি করে অটো কব্জা করে রেখেছেন এক শ্রেণির অটোচালক। ফলে, বঞ্চিত হচ্ছেন বেকার যুবকেরা।

রাতের পথে পরিবহণের সমস্যা যে মেটাতে পারত বলে আশা শহরবাসীর, সেই প্রিপেড ট্যাক্সি চালু হয়নি এখনও। স্টেশন চত্বরে ৬৭টি ট্যাক্সি আছে। চালকদের অভিযোগ, দিনে এক বারের বেশি ভাড়া মেলে না। যাত্রীদের আবার অভিযোগ, ভাড়া পেলেই চড়া টাকা হাঁকেন ট্যাক্সি চালকেরা। যদিও চালকেরা সে কথা মানতে নারাজ। ট্যাক্সিতে মিটার চালু না থাকায় ভাড়া নিয়ে যাত্রীরা বিভ্রান্ত হন। ২০০৮ সালে একবার প্রি-পেড ট্যাক্সি চালুর উদ্যোগ হয়েছিল। অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন তৎকালীন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। যাত্রী ও ট্যাক্সিচালকদু’তরফের কথা ভেবেই শহরে ২৪ ঘণ্টা প্রি-পেড ট্যাক্সি পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা হয়। ঠিক হয়, গন্তব্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হবে স্ট্যান্ডে। স্টেশন চত্বরে একটি বড় বুথ করা হবে। সেখানে থাকবে যাত্রীদের বিশ্রামাগার ও শৌচালয়। রাতে ট্রেন থেকে নেমে বাড়ি ফেরার দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবেন শহরবাসী। গাঁটের স্বস্তি ফেরা ছাড়াও নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত থাকবে বলে আশা করা হয়েছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। বিপ্রেন্দুবাবু জানান, ট্যাক্সি বুথ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রেল দিতে না পারায় আর উদ্যোগ এগোয়নি। তিনি বলেন, “দুর্গাপুর তো অনেক বদলে গিয়েছে। গণ পরিবহণ ব্যবস্থাও আধুনিক হওয়া দরকার। প্রি-পেড ট্যাক্সি দুর্গাপুরকে আর এক ধাপ এগিয়ে দিত। দুর্ভাগ্যের বিষয় তা হয়নি।” আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘বর্ধমান জেলা ট্যাক্সি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিয়মিত ভাড়া না মেলায় হতাশ ট্যাক্সি চালকেরা। প্রি-পেড ট্যাক্সি চালু করতে পারলে ভাড়া নিয়েও অস্বচ্ছতার অভিযোগ থাকবে না। যাত্রীরা ট্যাক্সি চড়তে আসবেন।” আধুনিক দুর্গাপুরে এই পরিষেবা দ্রুত চালু হওয়া দরকার বলে সওয়াল করেছেন স্বপনবাবুও।

কিন্তু সেই সম্ভাবনা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সে নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে নানা মহলেই।

ছবি: বিকাশ মশান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন