প্রতারণা রুখতে স্কুলে প্রশিক্ষণ পুলিশের

বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য যেতে হয় পুলিশের কাছে। কিন্তু, বিপদে যাতে না পড়তে হয়, সে জন্য প্রয়োজন সচেতনতার। সাইবার অপরাধ বা মাদক চক্র থেকে দূরে থাকা, কিংবা ইভটিজিংয়ের শিকার হলে কী করণীয়— স্কুলে স্কুলে শিবির করে সে সব বিষয়ে সচেতন করায় উদ্যোগী হয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:৩৮
Share:

আসানসোলের জহরমল জালান হাইস্কুলে শিবির। ছবি: শৈলেন সরকার।

বিপদে পড়লে সাহায্যের জন্য যেতে হয় পুলিশের কাছে। কিন্তু, বিপদে যাতে না পড়তে হয়, সে জন্য প্রয়োজন সচেতনতার। সাইবার অপরাধ বা মাদক চক্র থেকে দূরে থাকা, কিংবা ইভটিজিংয়ের শিকার হলে কী করণীয়— স্কুলে স্কুলে শিবির করে সে সব বিষয়ে সচেতন করায় উদ্যোগী হয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট।

Advertisement

কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, শিল্পাঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, কমবয়সী ছেলেমেয়েরা নানা রকম প্রতারণার পাল্লায় পড়ছে বেশি। তা এড়াতে বিভিন্ন স্কুলে কিছু পড়ুয়াকে বেছে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই পড়ুয়ারা আবার সহপাঠীদের মধ্যে সেই সচেতনতা তৈরির কাজ করবে। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তাঁরা নিজেরা বিষয়টি বুঝতে পারলে অভিভাবক ও সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করবে। এ ভাবে সচেতনতা ছড়িয়ে যাবে বৃহৎ ক্ষেত্রে। নাগরিকদের সাবধান করার কাজও অনেক সহজ হবে।’’

জানা গিয়েছে, শিবিরের জন্য আসানসোল-দুর্গাপুরের সব ক’টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে প্রাথমিক লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত আটটি স্কুলে প্রশিক্ষণ হয়ে গিয়েছে। প্রায় দেড় ঘণ্টার প্রশিক্ষণ পর্বকে ছ’টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে চকোলেট, বিস্কুট। তাদের পুলিশ বোঝানোর চেষ্টা করছে, ইদানীং বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে কী ভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে কিছু লোকজন। অনভিজ্ঞতার কারণে তাতে পা দিচ্ছে কমবয়সী ছেলেমেয়েরা। অপিরচিতদের সঙ্গে ভিডিও কল বা চ্যাট না করার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। কোনও অপরিচিতকে ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে না দেওয়া, কোনও ওয়েবসাইটে অশালীন ছবি দেওয়া হলে তার ঠিকানা (ইউআরএল) রেখে দেওয়া, সম্ভব হলে সেটির প্রমাণপত্র রাখা, লটারি জেতা বা অযাচিত ঋন মঞ্জুরের বার্তা দেওয়া ই-মেল নিয়ে উৎসাহ না দেখানোর কথা বলা হচ্ছে। এ ছাড়াও বলা হচ্ছে, বন্ধু তৈরির ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। সহজলভ্য চাকরির হাতছানি থেকে দূরে থাকতে হবে। অপরিচিতের সঙ্গে অজানা জায়গায় দেখা করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে হবে ছাত্রীদের।

Advertisement

ছাত্রদের বেশি সচেতন করা হচ্ছে সাইবার অপরাধ ও মাদকাসক্তি নিয়ে। কী ভাবে এ সব থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব, সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত থেকে জানা গিয়েছে, মাদক পাচারকারীরা এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাধ্যমে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের নানা ভাবে আকৃষ্ট করছে। কী ভাবে তা থেকে দূরে থাকা সম্ভব, সেই উপায় বাতলানো হচ্ছে স্কুলের শিবিরে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে চলা আসানসোলে একটি মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ও আক্রান্তদের ছাত্রদের সামনে হাজির করে তাঁদের অভিজ্ঞতা শোনানো হচ্ছে।

শিবিরে পুলিশের শীর্ষ স্তর থেকে অধস্তন কর্মী, কার কী অবস্থান ও কর্তব্য, তা ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সমস্যা পড়ে থানায় গিয়ে সাহায্য না পেলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কী ভাবে অভিযোগ জানানো যাবে, তা-ও জানানো হচ্ছে। নানা ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কমিশনারেটের তরফে এই শিবিরের দেখভাল করছেন এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ।

প্রশিক্ষণের শেষে থাকছে প্রশ্নোত্তর পর্ব। পুলিশ কমিশনার জানান, প্রশ্ন করার সময়ে পড়ুয়ারা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে, প্রচুর মতামতও দিচ্ছে। তাদের অনেক প্রশ্নের মুখে পুলিশও থতমত খাচ্ছে। তবে এ ভাবে পড়ুয়াদের সচেতন করা গেলে সমাজের সার্বিক সচেতনতা বাড়বে বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। সম্প্রতি এই শিবির হয়ে গিয়েছে বার্নপুর রিভারসাইড স্কুলে। এই স্কুলের অধ্যক্ষ সুশীলকুমার সিংহ বলেন, ‘‘অনেক কিছু আমাদেরও জানা ছিল না, যা এই শিবির থেকে জানছি। পুলিশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন