ব্যাঙ্কে সিঁধ কেটেও চুরির চেষ্টা ব্যর্থ

এই পদ্ধটি কেমন? একটি লোহার সুচালো দণ্ড। ওই দণ্ড দিয়ে দেওয়াল কেটে ঘরের ভিতরে ঢোকে চোরেরা। এই চুরির সময় মূলত বর্ষা বা শীতকাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৪
Share:

এই পথ দিয়ে ব্যাঙ্কে ঢোকো দুষ্কৃতীরা। —নিজস্ব চিত্র।

আধুনিক যুগে অগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে, ঘুমপাড়ানি ওষুধ স্প্রে করে বা ভয় দেখিয়ে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।

Advertisement

কিন্তু সিঁধ কেটে চুরি! বাবা-ঠাকুরদার মুখে শুনেছি কিংবা গল্প বইতে উল্লেখ রয়েছে। তবে চুরির সেই পুরনো ‘কলা’ বা ‘শিল্প’ আজও বর্তমান। তার ফের প্রমাণ মিলল কুলটির মিঠানি গ্রামে।

শুক্রবার ভোর রাতে সিঁধ কেটে লুঠপাটের চেষ্টা হয়েছে মিঠানি গ্রামের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকা রাখার সিন্দুক পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। তবে ব্যাঙ্কের সাইরেন, সিসি ক্যামেরা ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট করে দিয়েছে তারা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

ওই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হরলাল হালদার পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোড় ছ’টা নাগাদ স্থানীয় বাসিন্দা তথা তাঁর ব্যাঙ্কের এক অস্থায়ী কর্মীর ফোন থেকে ঘটনাটি জানতে পারেন। তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশে খবর দেন। দেখা গিয়েছে, ওই ব্যাঙ্কের ভবনটির পিছনে একই দেওয়ালের উল্টোদিকে ইসিএলের একটি পরিত্যক্ত আবাসন রয়েছে। স্থানীয় এক ডেকোরেটর মালিক ওই পরিত্যাক্ত আবাসনে নিজের ব্যাবসার গুদামঘর বানিয়েছেন। দুষ্কৃতীরা প্রথমে সিঁধ কেটে ওই পরিত্যক্ত আবাসনে ঢোকে। তারপর ওই আবাসনের দেওয়ালে সিঁধ কেটে ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢোকে। কিন্তু একাধিক লোহার গ্রিল ভেঙে আর টাকার সিন্দুক পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি তারা। ফলে লুঠপাটও চালাতে পারেনি। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার হলধরবাবু বলেন, ‘‘টাকা লুঠ করতে না পারলেও দুষ্কৃতীরা সাইরেন ও একাধিক সিসি ক্যামেরা ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’’

এই পদ্ধটি কেমন? একটি লোহার সুচালো দণ্ড। ওই দণ্ড দিয়ে দেওয়াল কেটে ঘরের ভিতরে ঢোকে চোরেরা। এই চুরির সময় মূলত বর্ষা বা শীতকাল। এইসময় লোকে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখে। আর চোরেদের চলাফেরার আওয়াজ পর্যন্ত শুনতে পায় না। ঠিক একই পদ্ধতিতে চুরি হয়েছে সিউড়ি শহরে একটি বড় সোনার দোকানে। প্রায়ই এই ‘শিল্পের’ মাধ্যমে চুরির কথা শোনা যায় বিভিন্ন জেলার নানা প্রান্ত থেকে।

বর্তমান যুগে এই পদ্ধতিতে চুরি করতে গিয়ে সব সময় চোরেরা সফল হয় তা নয়। যেমনটা ঘটেছে কুলটির ক্ষেত্রে। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় বছর সা’তেক আগে একবার এই একই কায়দায় দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের ভিতরে ঢুকেছিল। কিন্তু সে-বারও লুঠপাট চালাতে পারেনি। এই ব্যাঙ্কে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক। বেশিরভাগই ইসিএলের কর্মী। খনি কর্তৃপক্ষ তাঁদের মাসের বেতন এই ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই দেন। দুষ্কৃতীরা সম্ভবত ভেবেছিল মাসের প্রথমে কর্মীদের বেতন বাবদ টাকা ব্যাঙ্কে মজুত করা হয়েছে। সেই লোভেই ওরা সিঁধ কেটে লুঠপাটের চেষ্টা করেছিল বলে অনুমান। পুলিশ অবশ্য ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু সিসিটিভি ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক নষ্ট করে দেওয়ায় দুষ্কৃতীদের ছবি পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন