Madhyamik Examination 2024

তোড়জোড় তুঙ্গে, ভাবনা পরীক্ষার্থী কমার কারণে

সংগঠনের অনুমান, ২০১৭ সালে পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ায় বয়স একটা বাধা ছিল। সে জন্য গত বছর পরীক্ষার্থী কম ছিল। সেই বাধা কাটতেই পরীক্ষার্থীও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫০
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

রেজিস্ট্রেশন করার পরে মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৯০৩৭ জন। আবার অ্যাডমিট কার্ড নেওয়ার পরেও সব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে শিক্ষকদের একাংশের। তাঁদের অনুমান, নবম শ্রেণিতে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন বা নাম নথিভুক্ত করানো হয়। তার পরে ওই পরীক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ ‘স্কুলছুট’ হয়েছে। অনেক ছাত্রীর বিয়েও হয়ে গিয়েছে। পর্ষদের এক কর্তা বলেন, “স্কুল শিক্ষা দফতর ও শিশুকল্যাণ বিভাগ যৌথ ভাবে পরীক্ষার্থী কেন কমল, তা সমীক্ষা করে দেখবে। সেই রিপোর্ট শিক্ষা দফতরকে পাঠানো হবে। তবে টেস্টে অনেক স্কুল কড়াকড়ি করায় পরীক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ না হওয়ার ঘটনাও রয়েছে, সেটাও মনে রাখতে হবে।”

Advertisement

সোমবার দুপুরে মাধ্যমিক স্তরে জেলা মনিটরিং কমিটির ১৫ জন সদস্য বৈঠকে বসেন। সব পরীক্ষার্থী যাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে তা নিশ্চিত করার উপরে জোর দেওয়া হয়। পর্ষদ মনোনীত ওই কমিটির আহ্বায়ক অমিতকুমার ঘোষ বলেন, “সব পরীক্ষার্থী যাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারে, তা দেখতে বলা হয়েছে সব স্কুলকে। কমিটির সদস্যেরাও পরীক্ষার ক’দিন সকাল ৬টা থেকেই রাস্তায় থাকবেন।”

শুক্রবার থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এ বার ১২টার বদলে ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার্থীদের সকাল ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। গত বার জেলায় পরীক্ষার্থী ছিল ২২,৯৪৮ জন। এ বার সেই সংখ্য দ্বিগুনের কাছাকাছি। অ্যাডমিট নিয়েছে ৪১,৬০৬ জন। যদিও নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল ৫০, ৬৫৩ জন। অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের জেলার সভাপতি রূপক রায় বলেন, “নাম নথিভুক্ত করেও জেলায় যে ন’হাজারের উপর ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসছে না, তার মধ্যে তিন-চারটে কারণ খুবই উল্লেখযোগ্য। স্কুল ছুট, নাবালিকা বিয়েও অন্যতম।” ওই সংগঠনের অনুমান, ২০১৭ সালে পঞ্চম-ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ায় বয়স একটা বাধা ছিল। সে জন্য গত বছর পরীক্ষার্থী কম ছিল। সেই বাধা কাটতেই পরীক্ষার্থীও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

Advertisement

এ বছর জেলায় মূল পরীক্ষা কেন্দ্র হয়েছে ৬০টি, গত বছরের চেয়ে ৩৬টি কম। আবার গত বছর মোট পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ১৪১টি। এ বার ১৬টি কমে হয়েছে ১২৫টি। পর্ষদের দাবি, নজরদারির জন্য বেশ কয়েকটি মাপকাঠি দেখে কোন কোন স্কুলকে কেন্দ্র করা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা সংগঠনগুলির সঙ্গেই কথা বলে পর্ষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গিয়েছে, স্কুলের পরিকাঠামোগত সুবিধা, ভৌগলিক সুবিধা, পর্যাপ্ত জল, পর্যাপ্ত কর্মী, সিসি ক্যামেরা লাগানোর জায়গা, যাতায়াতের সুবিধাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ৩০০ থেকে ৮০০ জন পরীক্ষার্থী যাতে বসতে পারে, সেই রকম পরিকাঠামোযুক্ত স্কুলকে বাছা হয়েছে।

মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক বলেন, “পরীক্ষা কেন্দ্রের যাতায়াতের রাস্তা-সহ তিনটে জায়গায় সিসি ক্যামেরা থাকবে। শৌচালয়ে নজরদারি থাকবে। এ ছাড়াও প্রতিটি স্কুলে পর্ষদ মনোনীত পরিদর্শকরা থাকবেন। তাঁরা বিশেষ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।”

কিন্তু নাম নথিভুক্ত করিয়েও অনেকে পরীক্ষা দিচ্ছে না কেন? প্রধান শিক্ষকদের একাংশের দাবি, করোনার সময় থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে বিনা ‘বাধায়’ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পরীক্ষার আগে পিছিয়ে যাচ্ছে অনেকে। করোনার প্রকোপে বহু পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। নবম শ্রেণির পরে অনেক কিশোরই কাজে চলে যাচ্ছে। বিয়ে দেওয়া হচ্ছে মেয়েদের। জেলার একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে পড়া ছেড়ে দিয়েছে ৬২৭১ জন ছাত্রী। যার মধ্যে বিয়ের কারণে পড়া ছেড়েছে ২২২৫ জন, স্কুলছুট রয়েছে ৩৪৬২ জন। শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, ছাত্রের চেয়ে মাধ্যমিকে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ঠিকই, কিন্তু কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো জনমুখী প্রকল্প থাকার পরেও সরকারি হিসেবে এক বছরে ছ’হাজারের বেশি ছাত্রী পড়া ছাড়ছে, এটা খুবই চিন্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন