দিনে চাষের কাজ, রাতে বই হাতেই সফল বিন্দু

পাড়া-পড়শিরা সকালবেলায় দেখত খেতের কাজ করতে চলেছে ছেলেটি। আবার রাজমিস্ত্রীর কাজেও দেখা মিলত তার। তবে এত কাজেও ফাঁক পড়েনি লেখাপড়ায়। সব সামলেও এ বারের মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে বর্ধমানের চাষিমানা এলাকার বিন্দু মণ্ডল। বিন্দুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চার ভাই-বোন আর মা’কে নিয়েই তার সংসার। সংসার চালাতে খেতমজুরের পেশা নিতে হয়েছে তাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০১:০৪
Share:

বিন্দু মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

পাড়া-পড়শিরা সকালবেলায় দেখত খেতের কাজ করতে চলেছে ছেলেটি। আবার রাজমিস্ত্রীর কাজেও দেখা মিলত তার। তবে এত কাজেও ফাঁক পড়েনি লেখাপড়ায়। সব সামলেও এ বারের মাধ্যমিকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছে বর্ধমানের চাষিমানা এলাকার বিন্দু মণ্ডল।
বিন্দুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চার ভাই-বোন আর মা’কে নিয়েই তার সংসার। সংসার চালাতে খেতমজুরের পেশা নিতে হয়েছে তাকে। বিন্দুর মা প্রীতিদেবী জানান, দিনভর কাজের চাপে পড়াশোনায় তেমন সময় দিতে পারে না ছেলে। শুধু রাতের দিকেই পড়তে বসে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে বিভিন্ন ক্লাসের পড়ুয়াদের টিউশনও পড়ায় বিন্দু। প্রীতিদেবীই জানান, এ বার কাঞ্চননগর দীননাথ দাস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে ৭টি বিষয়ে লেটার নম্বর পেয়ে পাশ করা বিন্দু সময়মতো স্কুলে যেতে পারতো না। তবে ছাত্রের সমস্যা বুঝে এগিয়ে এসেছিলেন শিক্ষকেরা। বিন্দু জানায়, স্কুল শেষে মাস্টারমশাইরা তাকে পড়া দেখিয়ে দিতেন। পড়ার বই থেকে পোশাক-পরিচ্ছদ—সবকিছুরই জোগান দিতেন মাস্টারমশাইরা।

Advertisement

প্রধান শিক্ষক সুভাষ দত্ত জানান, মাধ্যমিকের রেজাল্টও সময়ে নিতে আসতে পারেনি বিন্দু। কারণ সেই সময় নদিয়ার মায়াপুরে রাজমিস্ত্রীর কাজে গিয়েছিল সে। বিন্দুর সহপাঠী বিক্রম মণ্ডল বলে, ‘‘স্কুলের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র ও। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ওর এই সাফল্য আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করেছে।’’ তবে বন্ধুদের প্রশংসায় খুশি হলেও বিন্দু জানে তাঁর লক্ষ্য এখনও বহু দূর। ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের শিক্ষক হতে চায় সে। তাই রেজাল্টের আনন্দের মাঝেই খেতের কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। স্মিত হেসে বলে, ‘‘‘সামনে এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন