ছবি: সংগৃহীত।
রাঢ় বাংলার কথা বাংলা সাহিত্যের যে সৃষ্টিতে অন্যতম প্রধান উপাদান, সেটি বোধহয় ‘ধর্মমঙ্গল’। মঙ্গলকাব্যের এই বিশিষ্ট ধারার দুই কবি, রূপরাম চক্রবর্তী, ঘনরাম চক্রবর্তীর জন্মস্থানও এই রাঢ়বঙ্গেই। অথচ, সেই এলাকাতেই ধর্মমঙ্গলের পালাগান এখন ধুঁকছে বলে অভিযোগ শিল্পীদের। তাঁদের আরও দাবি, এই পালাগানকে বাঁচাতে গায়কদের সাহায্যের ব্যবস্থা করুক সরকার।
শিল্পীরা জানান, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বীরভূম ও বর্ধমানের কয়েকটি গ্রামে এই পালাগানের আসর বসে। সেই সময়ে খানিক রোজগার হয় গায়কদের। বছরের বাকি সময়টা নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাঁদের। তবুও বংশানুক্রমে পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার তাগিদেই তাঁরা গ্রামে গ্রামে ছুটে যান বলে জানান শিল্পীরা।
কী রয়েছে এই পালাগানে? মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা গ্রামের গায়ক মাধবকুমার ঘোষ বলেন, “ধর্মরাজ ও তাঁর পুজোর উৎপত্তি-সহ নানা বিষয় বর্ণিত হয় গানে।’’ বাংলা সাহিত্যের গবেষকেরা জানান, গানগুলি পাঁচালি ছন্দে রচিত। সাধারণত ধর্মরাজের পুজোর দিন কয়েক আগে থেকে গান গাওয়া শুরু হয়। মূল পালা পুজোর দিন গাওয়া হয়। ধর্মমঙ্গলের কাহিনি বিস্তৃত লাউসেনের জন্মবৃত্তান্ত, হস্তিনা বধ, ইছাই বধ, নবখণ্ড বা স্বর্গারোহণ-সহ মোট বারোটি পালায়। তবে সময়াভাবে পালাগান পরিবেশন কোথাও কোথাও পাঁচটি পালাতেই বর্ণিত হয়। গায়কের সঙ্গে সঙ্গত দেওয়ার জন্য থাকেন দোয়ারি। থাকেন খোল-কর্তাল, হারমোনিয়াম শিল্পীরাও। এই পালাগানের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় ‘চালান’ গাওয়া। তবে টাকা ও শ্রোতার অভাবে কতদিন এই পালাগান টিকিয়ে রাখা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয়ে গায়ক চণ্ডী ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের এবং এই সংস্কৃতিকে বাঁচাতে কিছু সাহায্য করুক সরকার।’’ মাধবকুমার ঘোষ নামে এক গায়কের অভিযোগ, ‘‘শিল্পীদের জন্য রাজ্য সরকারের দেওয়া কার্ড পেতে বছর খানেক আগে গায়ক হিসেবে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।’’
লোকসংস্কৃতির গবেষকেরা জানান, এই গান বীরভূমের বনগ্রাম, কুরুমঘোষ, পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের গলিগ্রাম, শীতলগ্রাম, মঙ্গলকোটের বামুনাড়া, রায়নার হিজলনা, মেমারির চাঁচাই-সহ হাতে গোনা কয়েকটি গ্রামে এখনও পালাগান টিকে রয়েছে।
যদিও তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের জেলা আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে সব শিল্পীরা কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন, যাঁদের বয়স হতে হবে ৪৫ থেকে ৬৫ বছর। থাকতে হবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতাও। এমন শিল্পীদের পরীক্ষা করে দ্রুত কার্ড দেওয়া হবে।’’