কর্তাদের সামনেই মার

শুধু সিপিএম নয়, শনিবার বর্ধমানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছে বিজেপি, এসইউসিআই এমনকী তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরাও!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

কাটোয়ায় গোলমাল।ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

মনোননয়ন-পর্ব চলাকালীন বর্ধমানের দুই মহকুমাশাসকের সামনেই তৃণমূলের কাছে মার খেয়ে মাথা ফাটল প্রার্থীর এক প্রস্তাবকের। এমনটাই অভিযোগ সিপিএমের। শুধু সিপিএম নয়, শনিবার বর্ধমানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেছে বিজেপি, এসইউসিআই এমনকী তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরাও!

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই বর্ধমান শহরের চারদিক কার্যত ঘিরে রেখেছিল তৃণমূল। তবে তৃণমূলের মূল জমায়েত ছিল কার্জন গেটে। বিরোধীদের অভিযোগ, সকাল ১০টা থেকেই কার্জন গেটের সামনে প্রশাসনিক ভবনে যাওয়ার পথে তৃণমূলের ‘পাহারাদের’ হাতে আটকে পড়তে হয়েছে প্রার্থী-প্রস্তাবকদের। তাঁদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগও উঠেছে। এমনকী বিরোধী দলের প্রার্থীদের মারতে মারতে এলাকা ছাড়া করার দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। খণ্ডঘোষের শশঙ্গা পঞ্চায়েতের এক মহিলা প্রার্থীর কাছ থেকে মনোনয়নপত্রের নথি কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

বিরোধীদের অভিযোগ, শুক্রবার জেলা পরিষদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়েই কী হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছিল। এ দিন পুলিশ-প্রশাসনের সামনে তা-ই পূর্ণতা পায়। জেলা পরিষদের মনোনয়ন চলছিল জেলাশাসক দফতরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রতে (আরটিসি)। সেখানে তৃণমূলের লোকেরা গিয়ে প্রথম দফায় বিজেপি প্রার্থীদের মারধর করে বের করে দেয়। বিজেপির জেলার সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর অভিযোগ, “আমাদের জামালপুর ব্লক-সহ অন্য ব্লকের বেশ কয়েক জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য জেলাশাসকের কার্যালয়ে যান। তাঁদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।” একই অভিযোগ এসইউসিআই জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ করেরও। তাঁর দাবি, “জেলা পরিষদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য মাত্র পাঁচ জন প্রার্থী গিয়েছিল। কিন্তু টেবিল থেকে মনোনয়নপত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

এরই মধ্যে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ শুরুর আগে সিপিএমের বেশ কয়েক জন প্রার্থী ও প্রস্তাবক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। খণ্ডযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তৃণমূল নেতারা দলবল নিয়ে প্রথমে সিপিএমের এক আইনজীবী গোলমালে ‘উস্কানি’ দিয়েছেন বলে মারধর করে। তার পরে ঢুকে যায় আরটিসি ভবনে। সেখান থেকে সিপিএমের জেলা পরিষদের প্রার্থীদের বের করে দেওয়া হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কয়েক জন চায়ের দোকানে ঢুকেছিল। তৃণমূলের মহিলা বাহিনী তাঁদেরও তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এর পরে তাঁরা ঢোকেন প্রশাসনিক ভবনে। মহকুমাশাসকদের (বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ) সামনেই তৃণমূলের বাহিনী মারধর করে মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেয় বলে বিরোধীদের অভিযোগ। ওই পরিস্থিতিতে সিপিএম প্রার্থীরা একজোট হয়ে প্রতিবাদ করলে তৃণমূল হামলা চালায়। তাতেই সিপিএমের গলসির পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীর প্রস্তাবককে মারধর করলে তিনি রক্তাক্ত হন।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদারের অভিযোগ, “জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি দেবু টুডুর নেতৃত্বে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তার মধ্যেও আমরা বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের কথায়, “ব্লক ছেড়ে মহকুমাশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র দেব বলে আমরা গিয়েছিলাম। ১৪৪ ধারাকে লঙ্ঘন করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ঘরে প্রশাসনের সাহায্যে তৃণমূল তাণ্ডব চালিয়েছে।” জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি দেবু টুডুর অবশ্য দাবি, ‘‘আমি তো গত কয়েক দিন কালনাতেই রয়েছি।”

মহকুমাশাসকেরা অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বিজেপি জানান, তাঁদের তিন প্রার্থী থানায় অভিযোগ করেছে।

কাটোয়াতেও বিজেপি নেতা, কর্মীদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিজেপি নেত্রী সীমা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘দফায় দফায় আমাকে মারা হয়েছে। ব্যাগ ধরে টানা হয়েছে।’’ কাটোয়া থানার পুলিশ জানায়, এ দিন কাটোয়ায় গোলমালের ঘটনায় সাত জনকে আটক করা হয়েছে। গোলমালের অভিযোগ উঠেছে গলসিতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন