প্রার্থী নিয়ে শাসক দলে ‘কোন্দল’ মেমারিতে

পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকে রফাসূত্র

প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরের এই অসন্তোষ কমাতে বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান শহরের একটি জায়গায় বৈঠকে বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ছিলেন জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ-সহ জেলার আরও কয়েক জন নেতা। কিন্তু, বৈঠক চলাকালীনই প্রকাশ্যে এসে পড়ে গোষ্ঠীকোন্দল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:৩৮
Share:

বৈঠকের জায়গায় এক গোষ্ঠীর লোকজন। বর্ধমানে বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দলের নির্দেশ ছিল, গতবারের জয়ীরা যাতে এ বারও প্রার্থী হতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পূর্ব বর্ধমানের ২২টি ব্লকে সে রকম সমস্যা না থাকলেও মেমারি ১ ব্লকে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ ছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। আর সে কারণে ওই ব্লকের ১৭১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে শাসক দলের তরফেই মনোনয়ন পড়েছে ৩২৫টি। পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৫৭ জন! কার্যত এক-একটি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী দু’জন। এত গোঁজ প্রার্থী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই বলে তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছেন।

Advertisement

প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরের এই অসন্তোষ কমাতে বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান শহরের একটি জায়গায় বৈঠকে বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ছিলেন জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ-সহ জেলার আরও কয়েক জন নেতা। কিন্তু, বৈঠক চলাকালীনই প্রকাশ্যে এসে পড়ে গোষ্ঠীকোন্দল। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকের আগে মেমারি ১ ব্লকে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর নেতৃত্ব বাস ও গাড়িতে শহরে কর্মী-সমর্থক নিয়ে আসেন। বৈঠকের জায়গা তাঁরা ঘিরে রেখেছিলেন। দলের জেলা নেতারা পুলিশকে খবর দেওয়া হবে জানিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেন। এখানেই শেষ নয়, ওই বৈঠকের শেষে মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শহরের ভিতর বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কিছু কর্মী তাড়া করে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। নিত্যানন্দবাবু যদিও এমন ঘটনার কথা মানতে চাননি। সন্ধ্যার পরে অবশ্য রফাসূত্র বেরিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

মেমারি ১ ব্লকে শাসকদলের কোন্দল নতুন নয়। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে তা আরও বেড়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে মেমারি ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্য রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি দেন। দু’পাতার ওই চিঠিতে দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে লিখেছেন, ‘দলীয় কর্মীকে খুন, সরকারি সম্পত্তি দখলে অভিযুক্ত, সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স অপব্যবহারকারী, দলের রাজ্য সভাপতিকে অবমাননা করেছেন—এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী করা হচ্ছে। অথচ জয়ীদের প্রার্থী থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে’।

Advertisement

ওই চিঠিতে মধুসূদনবাবু পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গত বারের জয়ী সদস্যদের দলের সরকারি প্রার্থী করা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, এমন এক তালিকাও তুলে ধরেন। পাশপাশি তিনি লিখেছেন, ‘আপনি ও মমতাদি বারবার জয়ীদের এ বার প্রার্থী করার জন্য বললেও দু-এক জনের আপত্তিতে তা গ্রাহ্য করা হয়নি’।

তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ওই চিঠি পাওয়ার দুদিনের মাথায় অরূপবাবু দলের জেলা সভাপতিকে লিখিত ভাবে জানান, কেন ২০ জনকে বাদ হয়েছে, তা দেখতে। পর্যবেক্ষকের চিঠি পাওয়ার পরে স্বপনবাবু মেমারি ১ ব্লকের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।

দল সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরেই ব্লকের পর্যবেক্ষকদের হাতে প্রতীক-ফর্ম তুলে দেন জেলা সভাপতি। কিন্তু মেমারি ১ ব্লকে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি বলে পর্যবেক্ষকের হাতে প্রতীক ফর্ম দেওয়া যায়নি। বিরক্ত হয়ে ওই ব্লকের নেতাদের একাংশের কার্যকলাপ সম্পর্কে অরূপবাবুকে জানান জেলা সভাপতি। অরূপবাবু বর্তমান বিধায়ক নার্গিস বেগম, প্রাক্তন বিধায়ক আবু হাসেম মণ্ডল এবং ব্লকের পর্যবেক্ষক স্বপন বিষয়ীকে ফোন করে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেন। বুধবার বর্ধমানে বেশ কয়েক ঘণ্টা বৈঠকের পরেও সমাধানসূত্র বেরোয়নি।

এর পরেই বৃহস্পতিবারের বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে ওই কাণ্ড ঘটে। সন্ধ্যায় যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা মিটে গিয়েছে।”

তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, “এ দিন বৈঠকের শুরুতেই ঠিক হয় ১৭১টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ও ৩০টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন নিয়েই আলোচনা হবে। সেই মতো বেলা ১১টা থেকে প্রায় ৪টে পর্যন্ত সব নেতার উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। সেখানে ব্লক সভাপতির দাবি মতো ২০ জন জয়ী সদস্যকে প্রার্থী করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন