রবীন কাজির গ্রামে টক্কর সিপিএমের

এই পঞ্চায়েতে ১৯৮৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। কিন্তু ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতের ১২টি সংসদের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জেতে সিপিএম।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০১:৫১
Share:

জেমুয়ায় সিপিএমের পতাকা খুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

ব্লকে পঞ্চায়েত স্তরে মোট ৯৩টি সংসদের মধ্যে মাত্র সাতটিতে রয়েছেন সিপিএম প্রার্থী। সেই সাতটির ছ’টিই আবার একটিমাত্র পঞ্চায়েতে।

Advertisement

পঞ্চায়েতটি জামুড়িয়া ব্লকের হিজলগড়া। প্রচারে নেমে তৃণমূল প্রার্থীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই হিজলগড়া ২০১১-য় বিধানসভা ভোটের প্রচারে বেরিয়ে খুন হওয়া রবীন কাজির গ্রাম। কিন্তু সেই গ্রামেই সিপিএমের এমন টক্কর কেন, প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই। যদিও সিপিএম, এমনকী তৃণমূলকর্মীদের একাংশেরও দাবি, এলাকায় শাসক দলের কোন্দল, পঞ্চায়েতে নানা অনিয়মই জমি তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে বিরোধীদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই পঞ্চায়েতে ১৯৮৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। কিন্তু ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতের ১২টি সংসদের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জেতে সিপিএম। এ বার অবস্থা আরও খারাপ। জামুড়িয়া ব্লকে মাত্র ন’টি সংসদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল সিপিএম। তার মধ্যে দু’জন ইতিমধ্যেই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বাকি সাত জন সিপিএম প্রার্থীর ছ’জনই রয়েছেন এই হিজলগড়ায়। ২৩ আসনের জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতর যে ছ’টি সংসদে সিপিএম লড়ছে, তারও দু’টি এই হিজলগড়া পঞ্চায়েত থেকেই।

Advertisement

গোটা ব্লকে যখন কার্যত নিশ্চিহ্ন সিপিএম, তখন এই পঞ্চায়েতে ব্যতিক্রম কী ভাবে? সিপিএম নেতাদের একাংশের ব্যাখ্যা— প্রথমত, তপসি, পরাশিয়া পঞ্চায়েতে ২০১৩-য় সিপিএমের টিকিটে জেতা প্রার্থীরা পরে দলবদল করেন। ফলে ওই সব এলাকায় তাঁদের সংগঠন একেবারে তলানিতে। কিন্তু হিজলগড়ায় তা হয়নি।

দ্বিতীয়ত, জামুড়িয়ার এক সিপিএম নেতার দাবি, এই পঞ্চায়েতে শাসক দলের কোন্দল তাঁদের অক্সিজেন দিয়েছে। কেমন সে দ্বন্দ্ব? ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের পরে জামুড়িয়া ব্লক ২ সভাপতির পদে হিজলগড়ার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ তাপস চক্রবর্তীর জায়গায় মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায়কে আনা হয়। তৃণমূল কর্মীদের একাংশ জানান, সভাপতি পরিবর্তনের দু’দিনের মধ্যেই এই দুই নেতার অনুগামীর মধ্যে মারামারি হয়। যদিও এলাকায় কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই বলেই দাবি তাপসবাবু ও মুকুলবাবু, দু’জনেরই। তবে পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘দলে যাঁরা কোন্দল তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তৃতীয়ত, এই পঞ্চায়েতের কাজকর্মে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে বলে জানান এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই এই পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান পার্বতী মুর্মু বীরভূমের বোলপুরে থাকেন। ফলে যাবতীয় দায়িত্ব সামলাতেন উপপ্রধান। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক কাজকর্মে যথেষ্ট দেরি হয়েছে বলে জানান তৃণমূল কর্মীদেরই একাংশ। তা ছাড়া গ্রামের মূল রাস্তা সংস্কার না হওয়া, ‘গীতাঞ্জলী আবাস প্রকল্প’-এর সুযোগ অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া প্রকৃত ব্যক্তিরা না পাওয়া-সহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে গ্রামে। এই সব ক্ষোভ-বিক্ষোভও কাজে লাগানো গিয়েছে বলে দাবি সিপিএমের।

যদিও পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনের প্রার্থী রবীন কাজির স্ত্রী লতিফার বক্তব্য, ‘‘এখানে কোন্দল নেই। ওই ছ’টি সংসদেও আমরাই জিতব।’’ হিজলগড়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী রূপালী গড়াইয়ের অভিযোগ, ‘‘আমার স্বামী বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঠিকাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। আমি প্রার্থী হওয়ায় ওনার চাকরি দিয়েছে। আমরা মার খাচ্ছি, তবুও লড়াই ছাড়ব না। মানুষ বুথে যেতে পারলে জয় আমাদেরই হবে।’’ সিপিএম নেতা মনোজ দত্তেরও দাবি, ‘‘হিজলগড়ার মানুষ সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য মানুষ আমাদের উপরে আস্থা রেখেথেন। তাই টক্কর দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন