সংগঠন নেই, ‘কটাক্ষ’ বিরোধীকে

স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে দেখা যায়, পঞ্চায়েত স্তরে ভাতার ব্লকে মোট ৬৯টি সংসদে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিরোধীরা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৮ ১০:৫৪
Share:

প্রথম, ভাতার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে পূর্বস্থলী ১ ও মেমারি ১।

Advertisement

কোনও ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ফলাফল নয়। জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এলাকার ভিত্তিতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত স্তরে জেলার মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নিরিখে বিরোধীদের ‘স্কোরবোর্ড’ এটি! — এমন তথ্য সামনে আসার পরে ফের বিরোধীরা শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছে। উল্টে শাসক দলের দাবি, বিরোধীদের কোনও সংগঠন না থাকাতেই এই হাল।

স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে দেখা যায়, পঞ্চায়েত স্তরে ভাতার ব্লকে মোট ৬৯টি সংসদে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিরোধীরা। তার মধ্যে বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৩১ ও ৩৬। এই ব্লকে তৃণমূলের ৭২জন ‘গোঁজ’ প্রার্থীও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা পূর্বস্থলী ১ ব্লকে বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সংখ্যাটা ৫৩। এর মধ্যে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস প্রার্থী রয়েছেন যথাক্রমে ২৬, ২৪ ও তিন জন। শাসক দলের সাত জন প্রার্থিপদ তুলে নিয়েছেন। তালিকায় তৃতীয় মেমারি ১ ব্লক। এখানে অল্পের জন্য অর্ধশতক হারিয়েছেন বিরোধীরা! বিজেপি-র ১৫ জন, সিপিএমের ২৫ জন-সহ মোট ৪২ জন বিরোধী প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করেছেন। এখানে মোট ১৪৯টি মনোনয়ন প্রত্যাহারের মধ্যে শাসক দলের হয়ে মনোনয়ন দেওয়া ১০৬ জন তা প্রত্যাহার করেছেন। এই ব্লকের ১৭১টি আসনে সিপিএম ১৮৯টিতে মনোনয়ন দিয়েছিল। প্রত্যাহার পর্বের পরে দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত ১৮টির সঙ্গে আরও সাত জন সিপিএম প্রার্থী মনোনয়ন তুলে নিয়েছেন।

Advertisement

পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে মন্তেশ্বরে বিজেপির ১০, সিপিএম চার, কংগ্রেস এক ও দু’জন নির্দল প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। প্রত্যাহারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ১১ জন গোঁজ তৃণমূল প্রার্থীও। এই স্তরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভাতার। সেখানে ৯ জন বিজেপি, ৫ জন সিপিএম-সহ ১৫ জন বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ভাতারে ৩৮টি আসনের মধ্যে ১২টি অতিরিক্ত মনোনয়ন তুলে নেওয়া হয়েছে। মেমারি ১ ব্লকে ৩০টি আসনের মধ্যে ১৮ জন ‘গোঁজ’ প্রার্থী মনোনয়ন তুলেছেন।

প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রার্থী দিতে না পারা ও প্রত্যাহার মিলিয়ে জেলার ৩৮৩০টি বুথের মধ্যে ১০১৫টি বুথে কোনও স্তরেই নির্বাচন হচ্ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩২৩৪টি আসনের মধ্যে ২০৯৬টি সংসদে ভোট হচ্ছে না। আবার পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৮টি আসনের মধ্যে ৩৯৬টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতিমধ্যেই জিতে গিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের হিসেবে, জেলার ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪৭টি ও ২৩টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১৫টিতে ভোটের আগেই তারা ক্ষমতায় চলে এসেছে।

জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, কাটোয়া মহকুমার একটি বুথেও কোনও স্তরেই ভোট হচ্ছে না। তেমনই আউশগ্রামের দু’টি ব্লকেও কোনও স্তরেই ভোট দেওয়া হচ্ছে না ভোটারদের। এ ছাড়াও জামালপুর, রায়না ১ ও ২, খণ্ডঘোষ-সহ বিভিন্ন ব্লকে অনেক বুথে ভোট হচ্ছে না।

কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারে বিরোধীদের মধ্যে এমন প্রতিযোগিতা কেন? বিজেপির জেলা পর্যবেক্ষক অনল বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘এই জেলায় তৃণমূল নানা ভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছে। তাই এই ফলাফল!” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকেরও ক্ষোভ, “কোথাও ভোটের পরিবেশ রয়েছে? তৃণমূল নিজেদের মধ্যেই মারপিট করে এক জনকে মেরে ফেলল, সেখানে সিপিএম প্রার্থীদের কী অবস্থা, তা তো বোঝা যাচ্ছে।’’ এসইউসিআইয়ের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ কর বলেন, ‘‘আমাদের মতো ‘নিরীহ’ দলের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্যেও তৃণমূল হামলা চালাচ্ছে, সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে বিরোধীদলগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা হওয়াটাই স্বাভাবিক!”

যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, জেলার কোথাও বিরোধীদের সংগঠন না থাকাতেই এই হাল। বিরোধী দলের সমর্থকদের একাংশ আবার বলছেন, সংগঠন নয়। নেতাদের মাঠে নেমে নেতৃত্ব দেওয়ার অভাবের কারণেই এমনটা ঘটছে। যেমন, কাটোয়া মহকুমার কিছু জায়গায় সাম্প্রতিক অতীতেও বেশ কিছু ভোটে ভাল ফল করেছিল বিরোধীরা। কিন্তু পুরো মনোনয়ন-পর্বে সে ভাবে নেতাদের এগিয়ে এসে মনোনয়ন জমা দিতে দেখা যায়নি। আবার, কালনাতেও অধিকাংশ এলাকায় দেখা নেই বিরোধীদের।

হামলা, সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “উন্নয়নের সামনে জোর করে বিরোধীরা প্রার্থী করেছিলেন। সুযোগ পেয়ে তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে উন্নয়নের পাশে দাঁড়িয়ে আবির খেলেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন