মাকে নানা তীর্থ ঘুরিয়ে দেখাতে স্কুটারে ভ্রমণ

বছর চল্লিশের কৃষ্ণ জানান, তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজের সূত্রে থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। বছর চারেক আগে বাবার মৃত্যুর পরে মা চুড়ারত্নাকে মহীশূরের বাড়ি থেকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখেন।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০১:২৮
Share:

দুর্গাপুরে মায়ের সঙ্গে কৃষ্ণ কুমার। নিজস্ব চিত্র

সত্তর বছরের মাকে স্কুটারের পিছনে বসিয়ে দেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুরিয়ে দেখাতে বেরিয়েছেন কর্নাটকের মহীশূরের কৃষ্ণ কুমার। সম্প্রতি তিনি এসে পৌঁছন দুর্গাপুরে। তাঁর দাবি, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। ঘুরেছেন দেশের ১২টি রাজ্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ‘মাতৃসেবা সংকল্প যাত্রা’য় বেরিয়েছি। দেশের ছোট-বড় শহর, গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাব মাকে।’’

Advertisement

বছর চল্লিশের কৃষ্ণ জানান, তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজের সূত্রে থাকতেন বেঙ্গালুরুতে। বছর চারেক আগে বাবার মৃত্যুর পরে মা চুড়ারত্নাকে মহীশূরের বাড়ি থেকে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখেন। সেখানে এক দিন কথায়-কথায় জানতে পারেন, দূরের কোনও তীর্থস্থান তো বটেই, বাড়ির কাছাকাছি নানা মন্দিরও মায়ের দেখার সুযোগ হয়নি। কৃষ্ণ কুমার বলেন, ‘‘মায়ের কথা শুনে ভীষণ কষ্ট পাই। তাঁর সারা জীবন কেটেছে যৌথ পরিবারের নানা কাজকর্ম নিয়ে। সে দিনই ঠিক করি, দেশের সব তীর্থস্থান মাকে ঘুরিয়ে দেখাব।’’

কৃষ্ণ কুমার জানান, তাঁর বাবা প্রায় ২০ বছর আগে একটি স্কুটার উপহার দিয়েছিলেন। সেই স্কুটারেই মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেন তিনি। মায়ের সুবিধার জন্য পিছনের বসার আসনে সামান্য রদবদল করেন। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বেরিয়ে পড়েন দু’জনে। কেরল, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গনা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, ছত্তীশগঢ়, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ঘুরে পৌঁছেছেন এ রাজ্যে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্কুটারে সহজেই অলিগলি রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায়। তাই গন্তব্যের একেবারে কাছে পৌঁছে যেতে পারি। মাকে হাঁটতে হয় না।’’ পথে কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি? কৃষ্ণ কুমার বলেন, ‘‘বাবার উপহারের স্কুটার এখনও পর্যন্ত একবারও বিগড়ে যায়নি।’’

Advertisement

কৃষ্ণ কুমার জানান, সারা দিন চলার পরে রাতে তাঁরা আশ্রয় নেন তীর্থস্থানের কোনও অতিথি নিবাসে। তিনি বলেন, ‘‘কোনও হোটেল বা লজে আমরা উঠি না। তীর্থস্থানের অতিথি নিবাসের খোঁজ করি। অধিকাংশ মানুষ হৃদয়বান। তাঁরা আমাদের সাহায্য করেন।’’ যাত্রার খরচ জোগাড় হচ্ছে কী ভাবে? তিনি বলেন, ‘‘১৩ বছর চাকরি করেছি। মায়ের নামে বেতনের অর্থ জমিয়েছি। তা থেকে সুদ মেলে।’’

দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের ‘স্বামী বিবেকানন্দ বাণীপ্রচার সমিতি’ থেকে বেরিয়ে ফের রওনা হওয়ার সময়ে তিনি বলেন, ‘‘মা-বাবা বেঁচে থাকার সময়ে তাঁদের সেবা করা, খেয়াল রাখাই সন্তানের কাজ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন