‘আপন’ দূরে ঠেলেছে, হোমের ‘অন্য’রাই ভাই

‘ভায়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, ভাই ফল খাবে গোটা গোটা, তোমরা যেন দিও না খোঁটা’—নিজের বানানো ভাইফোঁটার গান গুনগুন করত করতে দিদি বাঁ হাতের কড়ি আঙুল ঠেকিয়ে চলেছেন ভাইদের কপালে। ভাইয়েরা কেউ হাততালি দিয়ে হাসছে, কেউ বা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়েছে।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
Share:

হাসিমুখে। কাটোয়ার হোমে ছবিটি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘ভায়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, ভাই ফল খাবে গোটা গোটা, তোমরা যেন দিও না খোঁটা’—নিজের বানানো ভাইফোঁটার গান গুনগুন করত করতে দিদি বাঁ হাতের কড়ি আঙুল ঠেকিয়ে চলেছেন ভাইদের কপালে। ভাইয়েরা কেউ হাততালি দিয়ে হাসছে, কেউ বা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়েছে।

Advertisement

কাটোয়ার পাশে সুদপুরে ‘আনন্দআশ্রমে’ ভাইফোঁটাটা বরাবরই একটু অন্যরকম। এখানকার বাসিন্দারা কেউ দুর্ঘটনায়, কেউ বা জন্ম থেকেই মানসিক ও শারীরিক ভাবে অক্ষম। তবে ভাইফোঁটার দিনে আনন্দে দূরে সরে যায় সেই অক্ষমতা।

সতেরো বছর আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত এই হোমে এসেছিলেন বছর পঞ্চাশের সীমা (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল না তখন। ভূগোলে স্নাতক ওই মহিলা মা, ভাই, বোনের আত্মহত্যার পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন। বাবাই তাঁকে হোমে রেখে দিয়ে যান। হোমে আসার পরে অবশ্য কেউ আর খোঁজ করেননি। সীমাদেবীর সঙ্গেই রয়েছেন সুদপুরের বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধা গৌরি চট্টোপাধ্যায়। পরিবার পরিত্যক্তা এক হাত ভাঙা ওই বৃদ্ধাকে ইতিউতি রাস্তায় ঘুরতে দেখে এলাকার লোক সুদপুরের এই সংস্থায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। আপাতত বছর তিনেক ধরে এটাই তাঁর ঘরবাড়ি। গৌরি, সীমার মতো জুলেখা, সায়েদা, আয়েষারাও নানা কারণে ঠাঁই নিয়েছে এই হোমে। এখন এখানেই দাদা-ভাই খুঁজে পেয়েছে তাঁরা। মঙ্গলবার ভাইফোঁটার সকালে দেখা গেল নতুন সম্পর্কের সেই ছবি।

Advertisement

সকাল থেকেই চন্দন বেঁটে থায় মিষ্টি সাজিয়ে তৈরি ছিলেন দিদিরা। ফোঁটা দেওয়ার পরে ভাইদের মুখে মিষ্টি, পায়েস তুলে দিয়ে তবেই খেলেন তাঁরা। প্রায় দুশো আবাসিকের জন্য ভাইফোঁটার বিশেষ মেনুর ব্যবস্থা রেখেছিল হোম কর্তৃপক্ষও। ডাল, বেগুনি, ছানার ডালনা দিয়ে দিব্যি ভাইফোঁটার ভোজ সারলেন তাঁরা। হোমের আবাসিক, প্রবীণা গৌরি দেবী বলেন, ‘‘বাড়ির লোক তাড়িয়ে দিয়েছিল। এরাই আপন করে নিয়েছে। এরাই আমার ভাইবোন।’’ পাশে থাকা আখতার মুখে কিছু বলতে না পারলেও প্রিয় দিদিকে জড়িয়ে ধরে আদরে বুঝিয়ে দিল পরিবার থেকে দূরে নয়,বরং এটাই তাদের পরিবার।

আনন্দ নিকেতনের সম্পাদক সুব্রত সিনহার কথায়, ‘‘কোনও শিশুকে শিশু সুরক্ষা কমিটি দিয়ে যায়, তো কাউকে এলাকাবাসী। এখানে এসে এরা নতুন করে দিদি, মাসি, পিসি সম্পর্কগুলো খুঁজে পান। মূলস্রোতে ফেরেন। এদের আনন্দের কথা মাথায় রেখেই প্রতিবছর রাখি, ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন