জন্মের শংসাপত্র পেতে ঘুরে যাচ্ছে বছর

সদ্যোজাত শিশুদের জন্মের শংসাপত্র পেতে বছর ঘুরে যাচ্ছে— বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ অভিভাবকদের। তাঁদের দাবি, প্রথমেই হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়ে দেন তিন মাস পরে এসে আবেদন করতে হবে। তারপরে শংসাপত্র হাতে পেতে গড়িয়ে যায় বছর। আবার হাসপাতালের নথি না পেলে পঞ্চায়েত বা পুরসভাও শিশুর জন্মের শংসাপত্র দেয় না।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০১:২২
Share:

সদ্যোজাত শিশুদের জন্মের শংসাপত্র পেতে বছর ঘুরে যাচ্ছে— বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ অভিভাবকদের। তাঁদের দাবি, প্রথমেই হাসপাতালের কর্মীরা জানিয়ে দেন তিন মাস পরে এসে আবেদন করতে হবে। তারপরে শংসাপত্র হাতে পেতে গড়িয়ে যায় বছর। আবার হাসপাতালের নথি না পেলে পঞ্চায়েত বা পুরসভাও শিশুর জন্মের শংসাপত্র দেয় না। ফলে হয়রানি তো হচ্ছেই, বহু সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতেও মুশকিল হচ্ছে বলে ক্ষোভ অভিভাবকদের।
যদিও এই ঘটনার কথা শুনে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বিস্মিত। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়ার যে কাগজ দেওয়া হয়, সেই কাগজ পুরসভা বা পঞ্চায়েতে দেখিয়ে নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করলেই জন্ম শংসাপত্র পাওয়ার কথা। হাসপাতাল থেকেই জন্ম শংসাপত্র নিতে হবে এমন তো কোনও নিয়ম নেই।” বাস্তবে অবশ্য হাসপাতালের নথি পঞ্চায়েত বা পুরসভায় না গেলে তারা কোনও মতেই জন্ম শংসাপত্র অভিভাবকদের হাতে তুলে দেন না। তাঁদের দাবি, এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

Advertisement

নিয়ম অনুযায়ী, শিশুর জন্মের ২১ দিনের মধ্যে অভিভাবককে শংসাপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শংসাপত্র পাওয়ার জন্য আবেদনটুকুও ২১ দিনের মধ্যে করা যায় না। অভিভাবকদের দাবি, এই যে ‘নিয়মভঙ্গ’ শুরু হল, তার রেশ কাটতে বছর পেরিয়ে যায়। তাঁদের অভিযোগ, শংসাপত্রের জন্য আবেদন করার ফর্ম নিতে হলে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেখাতে হয়। তখনই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধীকরণ দফতরের কর্মীরা জানিয়ে দেন, তিন মাস পরে এসে আবেদন করুন। তিন মাস পরে গিয়ে আবেদন করা হলে, তাঁরা ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের পিছনে স্ট্যাম্প দিয়ে জানিয়ে দেন, বছর খানেক পরে শিশুর জন্ম শংসাপত্র মিলবে। তবে নির্দিষ্ট দিনে এসেও যে শংসাপত্র মিলবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। এর পরেও অন্তত দু’বার শংসাপত্রের জন্য ঘুরতে হয় বলে অভিভাবদের একাংশের অভিযোগ। তবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ওই দফতরের কর্মীদের দাবি, ন্যূনতম পাঁচ জন কর্মী ছাড়া নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে শিশুর জন্মের শংসাপত্র পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। বছরের পর বছর দু’জন কর্মী নিয়ে কাজ করার ফলেই শংসাপত্র পেতে এত দেরি হচ্ছে।

তবে শংসাপত্র পেতে দেরি হওয়ার ফল যে কী তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন মেমারির আঝাপুরের সন্ধ্যা বাউড়ি। কয়েকদিন আগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আমার এখানেই একটি কন্যা সন্তান হয়। তিন মাসের মধ্যে আচমকা কী একটা রোগে মেয়েটা মারাও যায়। পঞ্চায়েত থেকে বলেছিল, সরকারি সুযোগ সুবিধা মিলবে। কিন্তু জন্মের শংসাপত্র না থাকায় খাতায় কলমে প্রমাণই করতে পারছি না যে আমার কন্যা হয়েছিল।’’ রায়নার মশাডাঙা গ্রামের নূপুর বাগ, কাঞ্চননগরের অনিমা দাস, মঙ্গলকোটের সাঁড়ি গ্রামের তুষারকান্তি মণ্ডলদেরও অভিযোগ প্রায় একই রকম। তাঁদের দাবি, ‘‘বছর খানেক আগে শংসাপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। নির্দিষ্ট দিনে এসেও আমরা শংসাপত্র পাচ্ছি না। আবার শংসাপত্র না পাওয়ায় পঞ্চায়েত থেকে যে সব সুবিধা পাওয়া যায়, তাও পাচ্ছি না।’’ জামালপুরের শিবনাটি গ্রামের উত্তম কর্মকার কিংবা মেমারির গাঙ্গুয়া গ্রামের রয়েল হেমব্রমেরা আবার বলেন, ‘‘প্রসূতিকে ছাড়ার সময়ে হাসপাতালের কাগজ দেখিয়ে আবেদন করতে গেলে, দফতর থেকে বলা হয়, জন্ম শংসাপত্র পেতে তিন মাস পরে আবেদন করুন। সেই মতো আবেদন করতে এসেছি। শংসাপত্র কবে পাব জানি না।’’

Advertisement

সমস্যার কথা অজানা নয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা রোগীকল্যাণ সমিতিরও। গত মাসের সভায় এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনাও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সমিতির সভাপতি তথা রাজ্যের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কথায়, ‘‘সমস্যার কথা জানি। রোগীকল্যাণ সমিতিতে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। কর্মী কম থাকার জন্য এই সমস্যা বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতাল সুপারকে ওই দফতরে কর্মী বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করার জন্য বলা হয়েছে।”

আর বর্ধমান পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল থেকে নথি আসা উচিত এক সপ্তাহ অন্তর। কিন্তু সেই নথি আসে দু’বছর অন্তর। ফলে জন্মের শংসাপত্র দিতে পারেন না তাঁরা। তাঁদের দাবি, শুধুমাত্র ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেখে শংসাপত্র দিলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাতে শিশুর পরিজনদের হয়রানি বাড়ে। তাই হাসপাতালের নথি দেখেই তা দেওয়া হয়।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তাও বলেন, “কর্মী সঙ্কটের জানি। সে জন্য প্রতিটি হাসপাতালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধীকরণ দফতরে এক জন করে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে শিশুর জন্ম শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়াও অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন