অভিযানে আক্রান্ত ভূমি-কর্তা

আগে ছিল শাসানি, এ বার মার

বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকসার সাতকাহনিয়ায়। বিএলএলআরও সিদ্ধার্থ মজুমদার জানান, দিন কয়েক ধরেই খবর মিলছিল, কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েতের সাতকাহনিয়া ঘাট থেকে কোনও অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

আক্রান্ত: মারধরের পরে দফতরের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

অতীতে এই এলাকায় অভিযানে গিয়ে বালির অবৈধ কারবারিদের হুমকির মুখে পড়েছিলেন কাঁকসা ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলএলআরও)। অভিযোগ, ‘ফের এলে মারব’, এই বলে শাসিয়েও ছিল ওই কারবারিরা। ওই ঘটনার দু’মাস বাদে ফের অভিযানে গিয়ে আক্রান্ত হলেন বিএলএলআরও। হামলার মুখে পড়লেন দফতরের কর্মীরাও।

Advertisement

বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে কাঁকসার সাতকাহনিয়ায়। বিএলএলআরও সিদ্ধার্থ মজুমদার জানান, দিন কয়েক ধরেই খবর মিলছিল, কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েতের সাতকাহনিয়া ঘাট থেকে কোনও অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। দফতরের রেভিনিউ অফিসার মৃণালকান্তি দেব এবং তিন জন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বুধবার সকালে সেখানে অভিযান যান সিদ্ধার্থবাবু। তাঁরা এলাকায় পৌঁছে দেখেন, ঘাটে কেউ নেই।

সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে ঘাট থেকে বেরনোর সময়ে প্রায় ৪০ জন তাঁদের ঘিরে ধরে। সিদ্ধার্থবাবুর অভিযোগ, ‘‘প্রত্যেকের হাতেই বাঁশ-লাঠি ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা মারধর শুরু করে। যথেচ্ছ কিল, ঘুষিও মারা হয়। মার খেয়ে মাটিতে পড়ে যান দফতরের কর্মীরা।’’ মৃণালকান্তিবাবু বলেন, ‘‘ওরা জিজ্ঞাসা করে, ‘বার বার বারণ করা সত্ত্বেও কেন এসেছেন এলাকায়?’ মারধরে হাতে চোট পেয়েছি।’’ ভাঙচুর করা হয় আধিকারিকের গাড়িতেও। প্রহৃত হন গাড়ির চালক মৃত্যুঞ্জয় সাহাও। তাঁর দবি, ‘‘বনেট খুলে কেরোসিন ঢেলে গাড়ি জ্বালিয়েও দিতে যায় দুষ্কৃতীরা।’’

Advertisement

সিদ্ধার্থবাবু জানান, গোলমাল চলাকালীন তাঁরা কোনও রকমে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের বনকাটি পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে ওই পঞ্চায়েত অফিসে এসে বিএলএলআরও এবং বাকিদের উদ্ধার করে পানাগড় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায় কাঁকসা থানার পুলিশ।

অবৈধ বালির কারবার রুখতে গিয়ে গোলমালের ঘটনা রাজ্যে অবশ্য নতুন নয়। এর আগে হুগলির বলাগড়ে নিজের দফতরেই আক্রান্ত হন বিএলএলআরও। বছর খানেক আগে বিডিও (কাঁকসা) অরবিন্দ বিশ্বাসও অভিযোগ করেন, বালির ট্রাক্টর আটক করায় তাঁকে ফোনে হুমকি দিয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জন। চলতি বছরে, মাস দুয়েক আগে এই সাতকাহনিয়া এলাকাতেই অভিযানে এসে অবৈধ বালির কারবারিদের হুমকির মুখে পড়েন সিদ্ধার্থবাবুই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের দাবি, ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে প্রায়ই অবৈধ বালির কারবারি, দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি, আগুন ধরানোর মতো ঘটনাও ঘটে। সেই সঙ্গে এলাকায় পুলিশের অভিযান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদেরক খোঁজে তল্লাশি চলছে।

কিন্তু কেন বারবার গোলমাল হচ্ছে সাতকাহনিয়াতেই? এলাকাবাসীর দাবি, অজয়ের পাড়ে কাঁকসার শিবপুর থেকে বসুধা পর্যন্ত প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকায় বালি তোলার এমন অবৈধ কারবার চলছে। কারণ, অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে পুলিশি ধরপাকড় তেমন হয়নি। তা ছাড়া অবৈধ বালির কারবারিদের পিছনে এলাকার একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীরও মদত রয়েছে বলে অভিযোগ।

এ দিনের ঘটনার প্রেক্ষিত বিডিও অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘আমরা এই অভিযান আরও বাড়াব। কোনও ভাবেই অবৈধ বালির কারবার মেনে নেওয়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন