মন্দির থেকে ফিরেই মায়ের রক্তাক্ত দেহ

বাড়ির সবাই মিলে পাড়ার কালীপুজো দেখতে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে মাকে মণ্ডপে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি ফিরে আসে ন’বছরের ছেলে সূর্য। ঘরের ভেজানো দরজা খুলতেই দেখে, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মা। সূর্যর চিৎকারেই ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ভাতার শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৭
Share:

বাড়ির সবাই মিলে পাড়ার কালীপুজো দেখতে গিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পরে মাকে মণ্ডপে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি ফিরে আসে ন’বছরের ছেলে সূর্য। ঘরের ভেজানো দরজা খুলতেই দেখে, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মা। সূর্যর চিৎকারেই ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। তবে কালীপুজোর রাতে ভাতারের মান্দারবাটি গ্রামে এমন নৃশংস ভাবে খুনের কারণ কী তা নিয়ে স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছেও।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ঝুমারানি খাঁর (৩০) শ্বশুর ধনহরি খাঁ ভাতার থানায় খুনের অভিযোগ করেছেন। বউমার সারা শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর দাগ ছিল বলেও তাঁর দাবি। পুলিশও জানিয়েছে, ঝুমাদেবীর ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি সম্পূর্ণ ভাবে কেটে গিয়েছিল। আততায়ীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ফলে ওই ঘটনা হতে পারে বলেও পুলিশের অনুমান। রবিবার বিকেলে কুকুর নিয়ে গ্রামে তদন্তে যায় পুলিশ।

ঝুমাদেবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দেড়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান ঝুমাদেবীর স্বামী দীনথানবাবু। এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তাঁদের। মেয়ে স্থানীয় এরুয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির পড়ুয়া। আর ন’বছরের ছেলে সূর্য। তবে ঠাকুরদা-ঠাকুমার কাছেই থাকত দুই ভাইবোন। আর ঝুমাদেবী বর্ধমান শহরের একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। দু’সপ্তাহ অন্তর ভাতারে শ্বশুরবাড়িতে যেতেন তিনি। এ দিন মণ্ডপ থেকে কখনই বা তিনি বাড়ি এলেন আর কেনই বা তাঁকে খুন করা হল তা স্পষ্ট নয় তাঁর পরিবারের কাছেও। ধনহরিবাবু বলেন, ‘‘পাড়ার ১৪টি পরিবার নিয়ে আমরা কালীপুজো করি। সেখানেই সবাই মিলে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে কখন বৌমা বাড়ি ফিরে এল, বুঝতে পারিনি। আমার বৌমাকে কেনই বা খুন করা হল, তা-ও বুঝতেই পারছি না।” তিনি আরও জানান, মণ্ডপে মাকে দেখতে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করে সূর্য। নাতি বাড়ি ফেরার জেদ ধরায় সূর্যকে সঙ্গে নিয়েই ফিরে আসেন তিনি। ভেজানো দরজা খুলেই সূর্যই দেখতে পায় মাকে। তাঁর দাবি, বউমার সারা শরীর রক্তে ভিজে গিয়েছিল। কোপানোর দাগ ছিল শরীর জুড়ে। ঝুমাদেবীর দেওর পলাশ খাঁ, ননদ রুমা মাঝির দাবি, পাড়ারই এক যুবক ঝুমাদেবীকে উত্যক্ত করত। বারবার বিয়ের প্রস্তাবও দিত। ঝুমাদেবী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্যই তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলেও তাঁদের দাবি। এ দিন মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে ভাতার থানায় ছুটে আসেন মঙ্গলকোটের চান্দরা গ্রামের অনিল ধারা ও সোনা ধারা। খুনের কারণ নিয়ে দিশেহারা তাঁরাও।

Advertisement

পুলিশও জানিয়েছে, ওই মহিলাকে গলায়, হাতে সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো কিছু দিয়ে কোপানো রয়েছে। আততায়ীকে বাধা দিতে গিয়ে ঝুমারানিদেবীর ডান হাতের আঙুল সম্পূর্ণ ভাবে কেটে গিয়েছে। তবে দেওয়া বা ননদ যে দাবি করেছেন তা ঠিক, না কি খুনের পিছনে অন্য কারণ রয়েছে তা এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “কী কারণে খুন করা হয়েছে, সেটা এখনও জানা যায়নি। তদন্তের গতিপ্রকৃতি বুঝতে গ্রামে পুলিশ কুকুর নিয়ে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন