rice mill

চালকলের পাঁচিল ভেঙে মৃত ২ শ্রমিক

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত ও আহতদের বাড়ি মণ্ডলগ্রামেই। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে, ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেমারি শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:১৭
Share:

মেমারির এই চালকলেই ঘটেছে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র।

গুদামে কাজের মাঝেই হুড়মুড়িয়ে পাঁচিল ভেঙে পড়ে। অন্যরা সরতে পারলেও দেওয়ালের কাছে থাকায় চালের বস্তা গায়ে পড়ে আটকে যান দুই শ্রমিক। মৃত্যুও হয় তাঁদের। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ পূর্ব বর্ধমানের মেমারির মণ্ডলগ্রামের ভাড়ারপাড় চালকলে ওই ঘটনার পরে মাটি কাটার যন্ত্র এনে উদ্ধার করা হয় বাদল দাস (৪৫) ও কিশোর হাজরার (৩৫) দেহ। আহত হয়েছেন আরও চার জন। রাতেই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসন নিহত ও আহতদের পরিবারের হাতে বিপর্যয়ের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণ তুলে দেয়। চালকল মালিকেরাও ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ ও স্থানীয় মানুষজন ভিড় করে রয়েছেন। গুদামের ভাঙা পাঁচিলের সামনেই চাল ডাঁই করা রয়েছে। শ্রমিকদের দাবি, গুদামের প্রতিটি খোপে এক-এক রকমের চাল রাখা হয়। এক-একটি খোপে ২৫-৩০ টন করে চাল থাকে। ছ’ফুট উচ্চতার ১০ ইঞ্চি চওড়া ইটের পাঁচিল দিয়ে খোপগুলি তৈরি করা হয়। একটি বড় গুদামে ন’টি খোপ রয়েছে। তার মধ্যেই একটি খোপের পাঁচিল ভেঙে যায় ওই রাতে। পুলিশের দাবি, যে দিকে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন, সেই খোপের চাল কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছিল। আর পাশের খোপের চাল ভর্তি ছিল। পাঁচিলটি এক দিকের চালের চাপ নিতে না পেরে ভেঙে পড়ে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত ও আহতদের বাড়ি মণ্ডলগ্রামেই। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে, ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, প্রায় ৩০ জন মিলে ছোট ছোট ঘরের মতো খোপ করা গুদামে চাল মজুত করছিলেন। তখনই দেওয়ালের কিছুটা ভেঙে পড়ে। তাঁরা ছিটকে বেরিয়ে এলেও দেওয়াল ঘেঁষে থাকায় বার হতে পারেননি বাদল ও কিশোর। পাঁচিল ভাঙতেই চালের স্তূপে চাপা পড়ে যান তাঁরা। গ্রামবাসী বাবু চৌধুরী, উদয় দাসদের দাবি, “প্রচণ্ড আওয়াজ পেয়ে এসে দেখি, চালকলের মালিকেরা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন। আমরা অনেকজন মিলে চাপা পড়ে থাকা দুই শ্রমিককে উদ্ধারের চেষ্টা করি। কিন্তু খুঁজে পাইনি। পরে মাটি কাটার যন্ত্র (‌জেসিবি) নিয়ে এসে ওই দুই শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়।

Advertisement

মৃত কিশোর হাজরার স্ত্রী রিতা হাজরার আক্ষেপ, “এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না! সংসারের জন্য ছেলেকেও চালকলে কাজে পাঠাতে হয়েছে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনার পরেই পুলিশ, পঞ্চায়েত ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়। সেখানে চালকল মালিকেরা মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (কৃষি) ও ওই ব্লকের (‌মেমারি ২) তৃণমূলের সভাপতি মহম্মদ ইসমাইল বলেন, “আমাদের ছেলেরা ওই পরিবারগুলির পাশে রয়েছে। চালকল মালিকেরা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারও ওই পরিবারগুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সে জন্য শ্রমিকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও প্রত্যেকের বিমা করানোর দাবি জানানো হয়েছে।’’ জেলা চালকল মালিকদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, “মানবিক দিক থেকেই আমরা ওই পরিবারগুলির পাশে রয়েছি। শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন