দু’চোখে আঁধার, তবু মনের জোরেই জয়

এমনিতেই টানাটানির সংসার, তার উপর উচ্চ মাধ্যমিক শুরুর আগে বাবাকেও হারায় ছেলেটি। আর মেয়েটি জন্ম থেকেই অন্ধ। চলাফেরা থেকে পড়াশোনা কানই ভরসা তার। তবে কোনও প্রতিবন্ধকতাই বাধা হতে পারেনি কাটোয়ার মুস্থূলি গ্রামের সৈকত মিত্র ও বর্ধমানের সর্বাণী সরকারের কাছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোতেই মুখে হাসি ফুটেছে তাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০১:৫৩
Share:

বাঁ দিকে, সৈকত। ডান দিকে, মার্কশিট হাতে সর্বাণী। নিজস্ব চিত্র।

এমনিতেই টানাটানির সংসার, তার উপর উচ্চ মাধ্যমিক শুরুর আগে বাবাকেও হারায় ছেলেটি। আর মেয়েটি জন্ম থেকেই অন্ধ। চলাফেরা থেকে পড়াশোনা কানই ভরসা তার। তবে কোনও প্রতিবন্ধকতাই বাধা হতে পারেনি কাটোয়ার মুস্থূলি গ্রামের সৈকত মিত্র ও বর্ধমানের সর্বাণী সরকারের কাছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরোতেই মুখে হাসি ফুটেছে তাদের।

Advertisement

জন্ম থেকেই লড়াইটি কঠিন ছিল সর্বাণীর। মাস্টারমশাইরা দেখতেন একটি মেয়ে ক্লাসের পড়া প্রতিদিন মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়ে যাচ্ছে। আর সন্ধ্যেবেলায় সেই রেকর্ডিং শুনেই চলছে পড়াশোনা। বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা পাড়ার বাসিন্দা সর্বাণীর বাবা অলোকবাবুও আংশিক অন্ধ। এক ডাক্তারের বাড়িতে ফাইফরমাস খাটেন তিনি। মা সুপ্রিয়াদেবীও পরিচারিকার কাজ করেন। কিন্তু কোনও বাধায় রুখতে পারেনি মেয়েটিকে। আচার্য দুর্গাপ্রসন্ন বিদ্যামন্দিরের পড়ুয়া সর্বাণী জানায়, শিক্ষক স্বপনকুমার চট্টোপাধ্যায় ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত চৌধুরীর সাহায্য ছাড়া এই সাফল্য মিলত না। বইপত্র, পড়ায় সাহায্য থেকে শুরু করে সবকিছুরই ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সুজিতবাবু। আর ভবিষ্যতে ইংরেজির শিক্ষিকা হতে চাওয়া সর্বাণীর বাবা-মার চিন্তা, এরপরের খরচ জোগাবে কে। তবে । ছাত্রীকে নিয়ে আশাবাদী সুজিতবাবু বলেন, ‘‘পড়াশোনার প্রতি ভালবাসাই সর্বাণীর জন্য আরও সাফল্য নিয়ে আসবে।’’

উচ্চ মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশের উপর নম্বর পাওয়া সৈকতের বাবা মাধববাবু খড়্গপুরের জলের পাইপ তৈরির একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করতেন। সম্প্রতি দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। সমস্ত স়ঞ্চয় ব্যয় করে চিকিৎসাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। সৈকত জানায়, পরীক্ষা শুরুর ঠিক ৭ দিন আগে মারা যান মাধববাবু। পারলৌকিক ক্রিয়া চলাকালীনই কয়েক কিলোমিটার দূরে দাঁইহাটে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে ঘোড়ানাষ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সৈকত। তার মা সঙ্গীতাদেবী বলেন, “এতদিন ছেলের পড়া থেকে সংসারের খরচ সব আত্মীয়রাই জুগিয়ে এসেছেন। এ বার দেখি কি করতে পারি।’’

Advertisement

আর সৈকতের বক্তব্য, ‘‘স্কুল ও গৃহশিক্ষকদের সহযোগিতাতেই এই সাফল্য।’’ ভবিষ্যতে নবদ্বীপ কলেজ থেকে এডুকেশন নিয়ে পড়ে শিক্ষক হতে চায় সৈকত। হার না মেনে গৃহশিক্ষকতা করেই পড়াশোনার খরচ তুলতে চায়। প্রায় রুদ্ধ গলায় সৈকত বলে, “বাবার আশীর্বাদে হয়তো বাকি পথটাও পেরিয়ে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন