অজয় ও অপূর্ব। —নিজস্ব চিত্র।
দু’জনের বাবা-ই দর্জির কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। বাড়িতে নিত্য অভাব। কিন্তু সব প্রকূলতাকে জয় করেই এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে দুর্গাপুরের ২ পড়ুয়া তাক লাগানো ফল করেছে।
দুর্গাপুরের ইছাপুরের বাসিন্দা অজয় সূত্রধর স্থানীয় এনসি হাইস্কুল থেকে কলা বিভাগে প্রায় ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। অজয়ের মাটির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, টিনের ছাউনির নীচেই সাজানো রয়েছে বইপত্তর। ইছাপুর হাটে গেলেই দেখা মিলবে অজয়ের বাবা কৃষ্ণপদবাবুর। অন্যের দোকানের দাওয়ায় বসেই নাগাড়ে সেলাই মেশিন চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণপদবাবু। নিজে হৃদরোগী হওয়ায় মাঝেসাঝেই দোকান বন্ধ রাখতে হয় বলে জানান কৃষ্ণপদবাবু।
ভবিষ্যতে ইতিহাসের শিক্ষক হতে চায় অজয়। সংসার আর চিকিৎসার খরচ সামলে কী ভাবে ছেলের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সূত্রধর পরিবার। মা মিঠুদেবী বলেন, ‘‘এত দিন পর্যন্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সরকার বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। এর পরে কী হবে জানি না।’’
দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা অপূর্ব দত্ত বিজ্ঞান বিভাগে প্রায় ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু সাফল্যের পথটা মোটেই মসৃণ ছিল না অপূর্বর কাছেও। বাবা দুলালবাবু বিধাননগর জোনাল মার্কেটে রোজই সেলাই মেশিন নিয়ে বসেন। দুলালবাবু জানান, মেয়ে স্মৃতিও স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। দুই ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ জোগাতে নাভিশ্বাস উঠছে দুলালবাবুর।
ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় অপূর্ব। পড়াশোনার পাশাপাশি সমান তালে চলে ছবি আঁকাও। কিন্তু এ বার উচ্চশিক্ষার খরচ কী ভাবে জোটানো যাবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে অপূর্বও। তবে তার আশা, ‘‘এতদিন স্কুলের শিক্ষকেরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। ফের হয়তো কেউ হাত বাড়িয়ে দেবেন।’’