চেনা মহতাব মঞ্জিল ছেড়ে নতুন ভবনে

প্রায় ষাট বছরের চেনা ‘মহতাব মঞ্জিল’ ছেড়ে দিচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। গোড়া থেকেই রাজ পরিবারের আবাসস্থল রাজবাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। কিন্তু ২০১৩ সালে ভবনটি ঐতিহ্যবাহী ঘোষণা হওয়ার পরে তা ছেড়ে অন্যত্র সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
Share:

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন। নিজস্ব চিত্র।

প্রায় ষাট বছরের চেনা ‘মহতাব মঞ্জিল’ ছেড়ে দিচ্ছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

গোড়া থেকেই রাজ পরিবারের আবাসস্থল রাজবাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। কিন্তু ২০১৩ সালে ভবনটি ঐতিহ্যবাহী ঘোষণা হওয়ার পরে তা ছেড়ে অন্যত্র সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের কাছে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠে পরিবেশ বান্ধব নতুন ভবন। আগামী বৃহস্পতিবার ওই ভবনের উদ্বোধন করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর।

উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “রাজবাটিতে বিশ্বমানের মিউজিয়াম গড়ে তোলা হবে। বিভিন্ন পুরাকীর্তি থেকে প্রাচীন ছবি, স্থানীয় লোক-সংস্কৃতি তুলে ধরে হবে, যাতে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে রাজবাটি।” তবে ততদিন পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ামক দফতরটি সেখানে থাকবে। বাকি সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম হবে নতুন ভবনে বলে জানন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিব দেবকুমার পাঁজা। তাঁর দাবি, প্রশাসনিক কাজকর্ম নতুন ভবনে হলে গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের সঙ্গে যুক্ত সকলের সুবিধা হবে। রাজবাটি থেকে নতুন ভবনের দূরত্বও অনেকটাই কম।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তার দাবি, “ইংরেজ আমলে মহতাব মঞ্জিল যে সংস্থা তৈরি করেছিল, প্রায় ১৭৫ বছর পর সেই সংস্থাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন তৈরি করছে।” জানা গিয়েছে, পাঁচতলা ভবনটিতে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে। ৪৫টি ঘর রয়েছে। রয়েছে ভবনের সামনে বিশাল বাগানও। এ ছাড়া জলের অপচয় রোধে বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। খরচ হচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

রাজবাড়ির ইতিহাস গবেষক নীরদবরণ সরকার বলেন, “কাঞ্চননগরে থাকাকালীনই মহাতাব চন্দ বর্ধমানের কেন্দ্রীয়স্থলে বাড়ি তৈরির চিন্তাভাবনা করেন। সেই ভাবনা থেকেই ১৮৪০ সালে ওই বাড়ি তৈরি করান। পরবর্তীতে তাঁর নামেই উত্তরসূরীরা বাড়ির নাম রাখেন।” জানা যায়, ১৯৫৪ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের অনুরোধে মহারাজা উদয় চন্দ ইতালীয় স্থাপত্যের অনুকরণে তৈরি রাজবাড়িটি সরকারের হাতে তুলে দিতে রাজি হন। বর্ধমানের সম্পত্তির মোট ৩২৩ একর সরকারের হাতে তুলেও দেন মহারাজা। সেখানেই ১৯৬০ সালের ১৫ জানুয়ারি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু।

২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ‘মহাতাব মঞ্জিল’কে ‘ঐতিহ্যবাহী বাড়ি’ ঘোষণা করে। জেলার হেরিটেজ কমিটির অন্যতম সদস্য সর্বজিৎ যশের দাবি, “রাজ্য হেরিটেজ কমিশন ওই বাড়িটিকে ঐতিহ্যবাহী ঘোষণা করার পরেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মহাতাব মঞ্জিল ছেড়ে নতুন ভবন তৈরর উদ্যোগ নেন।” উপাচার্য জানান, খড়্গপুরের আইআইটির বিশেষজ্ঞরা মহাতাব মঞ্জিল ঘুরে দেখে গিয়েছেন। তাঁরাই এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন