ভোগান্তি: দুর্গাপুরে হর্ষবর্ধন রোডে। ছবি: বিকাশ মশান
আগে ব্যবসায়ীরা ছুটতেন বাট্টা দিয়ে নোট ভাঙাতে। এখন পরিস্থিতি উল্টো। ব্যবসায়ীদের সিন্দুক উপচে পড়েছে কয়েনে। সেই বোঝা নামিয়ে কাঁধ হালকা করতে হত্যে দিয়ে তাঁরা পড়ে থাকছেন ব্যাঙ্কে। কিন্তু ব্যাঙ্কও গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে কয়েন-গেরোয় জেরবার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
নোটবন্দির বছর পার করেছে। কিন্তু খুচরোর প্রাচুর্যের সমস্যা আজও মেটেনি। এই অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন চায়ের দোকান, পানগুমটির মতো দোকানের মালিকেরা। তাঁরা জানান, পুঁজি কম। মহাজন খুচরো নিতে চান না। তার উপরে ক্রেতাদের অনেকেই বিশেষ বিশেষ কয়েন নিতে চান না। তাঁই দিন দিন জমছে খুচরোর পাহাড়। সমস্যা হচ্ছে ব্যবসায়।
দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এক দিকে খদ্দেররা নিজেদের কাছে জমে যাওয়া খুচরো দিয়ে সামগ্রী কিনতে আসছেন। কিন্তু ফেরত নেওয়ার সময় তাঁরা বেশি খুচরো নিতে চাইছেন না। চা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক কাপ চায়ের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা। খদ্দের ৩ টাকা দামের চা খেয়ে ১০ টাকার নোট দিলে ফেরত দেওয়ার সময় ৭টি ১ টাকার কয়েন দিলে নিতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, একটি ৫ টাকার কয়েন দিতেই হবে। আবার ছোট ১ টাকার কয়েন নিতে চাইছেন না অনেকে। হর্ষবর্ধন রোডের চা বিক্রেতা প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘ছোট হোক বা বড়। সবই দেশের মুদ্রা। অথচ খদ্দেররা বুঝতেই চান না। কী বিপাকে যে পড়েছি, সে আমরাই জানি! বেশি খুচরো মহাজনও নিতে চায় না। ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’
ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনের রবীন্দ্রভবনের কাছে হোটেল চালান প্রমোদ কুমার। খুচরো নিয়ে ভুগছেন তিনিও। জানালেন, এক সময় খুচরোর আকালে ব্যবসা চালানোই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। অথচ নোটবন্দির পর থেকে উল্টো পরিস্থিতি। দিন দিন খুচরোর ভিড়ে পুঁজি জমে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও সুরাহা দেখছি না। বছর ঘুরতে চলল। অথচ পরিস্থিতি বদলালো না!’’ সাইকেল সারাইয়ের দোকান চালান সঞ্জয় গড়াই। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিনই কিছু না কিছু খুচরো জমে যাচ্ছে। কিছুতেই সব বের করে দিতে পারছি না।’’ বেনাচিতিতে একটি পানের দোকানের কর্মী নির্মল সূত্রধর বলেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খুচরো চলবে। খদ্দেররা জোর করে দিয়ে যাচ্ছে। অথচ ফেরত নেওয়ার সময় খুচরো নিতে চাইছে না।’’
খদ্দেরদের একাংশের আবার অভিযোগ, বেশ কিছু দোকানিও খুচরো নিতে চাইছেন না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক খুচরো জমা নিতে না চাওয়াতেই এমন পরিস্থিতি।
কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি খুচরো নিতে চাইছে না কেন? ব্যাঙ্কগুলি যুক্তি খাড়া করেছে, কর্মীর অভাব। তাই অত খুচরো নিয়ে কে গুণবেন তা ঠিক করা যাচ্ছে না। তাই একসঙ্গে বহু খুচরো নিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আগে যেমন একেবারেই খুচরো নেওয়া বন্ধ রেখেছিল ব্যাঙ্কগুলি এখন অবশ্য তা হচ্ছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নোট দ্রুত যন্ত্রের সাহায্যে গোনা সম্ভব। খুচরোর বেলায় তা হয় না। পর্যাপ্ত কর্মী না থাকাতেই একসঙ্গে বেশি খুচরো নিতে পারছে না ব্যাঙ্কগুলি।’’
কিন্তু এই অবস্থা কতদিন চলবে? এর উত্তর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। যদিও বেঙ্গল সুবার্বাণ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল ঘোষ বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সত্যিই সমস্যায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সব দফতরে আমরা তাঁদের সমস্যার জানিয়েছি। যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্যা মেটানো যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’