অন্ধকারে ‘গতিধারা’, অভাব মেটাচ্ছে ক্যাব

প্রিপেড ট্যাক্সি চালুর উদ্যোগ হয়েছিল বছর সাতেক আগে। ট্যাক্সি বুথ গড়ার জায়গা না পাওয়ায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। বছরখানেক আগে ‘গতিধারা’ প্রকল্পে ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সি চালুর তোড়জোড় করেছিল রাজ্য সরকার। আশার আলো দেখেছিলেন শহরবাসী।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২০
Share:

দুর্গাপুরের রাস্তায়।—নিজস্ব চিত্র।

প্রিপেড ট্যাক্সি চালুর উদ্যোগ হয়েছিল বছর সাতেক আগে। ট্যাক্সি বুথ গড়ার জায়গা না পাওয়ায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। বছরখানেক আগে ‘গতিধারা’ প্রকল্পে ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সি চালুর তোড়জোড় করেছিল রাজ্য সরকার। আশার আলো দেখেছিলেন শহরবাসী। কিন্তু ট্যাক্সি চালকেরা আগ্রহ না দেখানোয় তা-ও হয়নি। সেই খেদ মিটিয়ে এ বার দুর্গাপুরে চালু হয়েছে এক বেসরকারি সংস্থার ট্যাক্সি পরিষেবা।

Advertisement

মুম্বইয়ের ওই অনলাইন ট্যাক্সি পরিষেবা সংস্থা এ রাজ্যে কলকাতার বাইরে দুর্গাপুরেই প্রথম পা রাখল। সবে মাসখানেক এই শহরে পরিষেবা শুরু করেছে তারা। আর এরই মধ্যে ‘বুকিং’ সংখ্যা প্রায় ছ’গুণ বেড়েছে বলে সংস্থাটির তরফে জানানো হয়েছে।

শহর আকারে বাড়লেও গত কয়েক বছরে দুর্গাপুরে পরিবহণ ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। শহরের মধ্য যাতায়াতের জন্য দিনে বাসের পাশাপাশি ভরসা নানা রুটে চলা অটো। কিন্তু সন্ধ্যার পরে অটো বিশেষ মেলে না। স্টেশন চত্বরে ৬৭টি ট্যাক্সি রয়েছে। কিন্তু ভাড়ার কোনও নির্দিষ্ট তালিকা নেই। তাই চালকেরা ইচ্ছে মতো চড়া ভাড়া হাঁকেন বলে অভিযোগ। মিটার চালু না থাকায় ভাড়া নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মতান্তর লেগেই থাকে। ২০০৮-এ প্রিপেড ট্যাক্সি চালু করতে চেয়েছিল পুরসভা। কিন্তু স্টেশন চত্বরে ট্যাক্সি বুথের জন্য প্রয়োজনীয় জমি মেলেনি।

Advertisement

বছরখানেক আগে রাজ্য সরকারের ‘গতিধারা’ প্রকল্প রূপায়ণে উদ্যোগী হয় বর্ধমান জেলা পরিবহণ দফতর। ট্যাক্সি পরিষেবার বিনিময়ে বেকারদের আয়ের ব্যবস্থা করা ছিল এই প্রকল্পের লক্ষ্য। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে পাঁচশো ট্যাক্সি চালুর কথা ছিল। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারির পরে একেবারে সাড়া মেলেনি। ট্যাক্সি কেনার জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও গোটা জেলায় হাতে গোনা কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে। ফলে, প্রকল্পটি আদৌ বাস্তবায়িত করা যাবে কি না, সে নিয়ে সংশয়ে জেলা পরিবহণ দফতর।

‘গতিধারা’য় কেন এই পরিস্থিতি? পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ আসনের ট্যাক্সিতে গান শোনার ব্যবস্থা, জিপিএস-সহ নানা ব্যবস্থা রাখতে হবে। একটি ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক রাখতে হবে। ২৪ ঘণ্ট ট্যাক্সি চালানোর পরিকাঠামো থাকতে হবে। বনধ বা ধর্মঘটেও পরিষেবা চালু রাখতে হবে। এ সব জানিয়ে হলফনামা দিতে হবে ট্যাক্সি চালককে। জেলা ট্যাক্সি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই সব শর্ত পূরণ বেশ খরচসাপেক্ষ। তাছাড়া কলকাতার তুলনায় অন্য শহরে যাত্রীর সংখ্যা বেশ কম। তাই ভাড়ার হারও বেশি রাখা দরকার।

সরকারি প্রকল্প দিনের আলো দেখতে না পারলেও বেসরকারি ওই সংস্থার ‘ক্যাব’ পরিষেবা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দুর্গাপুরে। শহরের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজগুলির পড়ুয়ারা জানান, এই পরিষেবা আসায় তাঁরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। মোবাইলের অ্যাপ ব্যবহার করে গাড়ি বুকিং করে ফেলা যায়। কোনও কারণে বুকিং বাতিল হলেও গুণাগার দিতে হয় না। সংস্থার ‘কোয়ালিটি অ্যাসিওর‌্যান্স’ বিভাগের আধিকারিক অঞ্জন বিশ্বাস জানান, ১ মার্চ মাত্র ৬টি গাড়ি নিয়ে যাত্রা শুরু এই শহরে। দিনে বুকিং হত ৪০-৫০টি। এক মাস পরে তা প্রায় তিনশোয় ঠেকেছে। এখন গাড়ির সংখ্যা ১৭। দিনে গড়ে প্রতি গাড়ি ১৩-১৫ ঘণ্ট চলছে। অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘চাহিদা বাড়ছে। আমাদের লক্ষ্য ৫০টি গাড়ি চালানো। সেদিকে এগোচ্ছি।’’ তিনি আরও জানান, মোট ৫ ধরনের গাড়ির পরিষেবা দিয়ে থাকে সংস্থা। তবে দুর্গাপুরে আপাতত দু’ধরনের পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।

সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়িতে জিপিএস যন্ত্র লাগানো আছে। চালকের মোবাইলেও রয়েছে জিপিএস পরিষেবা। চালক ও যাত্রী প্রতি মুহূর্তে জানতে পারছেন, তাঁরা কে কোথায় রয়েছেন। চালক ম্যাপ দেখে পৌঁছে যাচ্ছেন যাত্রীর ঠিকানায়। যাত্রাপথেও দু’পক্ষই দেখতে পারেন, কোন জায়গা দিয়ে তাঁরা যাচ্ছেন। গাড়ি নেওয়ার সময়েই যাত্রী ভাড়ার আঁচ পেয়ে যাচ্ছেন। সংস্থার দাবি, ভাড়ার হার রাখা হয়েছে সাধ্যের মধ্যে। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দুর্গাপুরে অটো রিজার্ভ করতে যে টাকা দিতে হয় আমরা প্রায় সেই টাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছি।’’

সরকারি গতিধারা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী? জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানের জন্য তবু ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু দুর্গাপুরে একটিও না। পরিবহণ দফতরের এক কর্তার মতে, ‘‘শর্ত শিথিল না করা হলে আবেদন পাওয়া কঠিন। তার উপর বেসরকারি ট্যাক্সি এ ভাবে বাজার দখল করলে পরিস্থিতি আরও হাতের বাইরে চলে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন