রক্ত রোগীর শরীরে যাওয়ার পরে তাঁর শরীরে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আসানসোল জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী, এই ‘হেমোভিজিলেন্স’ পদ্ধতি চালু হওয়ায় খুশি সকলেই। কিন্তু তাঁদের চিন্তা বাড়ছে রক্তদাতার সংখ্যা কমে যাওয়ায়। সে কারণে পর্যাপ্ত রক্তের জোগান দেওয়া সব সময় সম্ভব হচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।
জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২০৩টি শিবির থেকে ৭৮২১ ইউনিট রক্ত মিলেছিল। অর্থাৎ, শিবির প্রতি গড়ে ৩৮.৫ ইউনিট। ২০১৬-র নভেম্বর পর্যন্ত ২২৩টি শিবির থেকে মেলে ৮১৫০ ইউনিট। গড়ে ৩৬.৫ ইউনিট। শিবিরের সংখ্যা বাড়লেও রক্ত সংগ্রহের হার বৃদ্ধি না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
ব্লাড ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দেখা যাচ্ছে, আগে যেখানে এক-একটিতে অন্তত পঞ্চাশ ইউনিট রক্ত মিলত সেখানে এ বার কিছু শিবিরে তা বারোয় দাঁড়িয়েছে। সেই ঘাটতি নতুন শিবিরের মাধ্যমে পূরণ হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা মেটেনি।’’ তিনি জানান, এই খনি-শিল্পাঞ্চলে ৪১টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা জায়গায় শিবিরের আয়োজন করে। কিন্তু সে ভাবে রক্তদাতা না মেলায় সংগঠনগুলিও সমস্যায় পড়ে যাচ্ছে।
রক্তদাতা সংগঠনের এক সদস্যের দাবি, সংখ্যায় বাড়লেও এখন অনেক শিবিরই কোনও নেতা বা ব্যক্তিবিশেষের প্রচারের অঙ্গ হিসেবে আয়োজিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা সেই সব শিবিরে যাওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন না। ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড ইমিউনোহেমাটলজি’র সদস্য প্রবীর ধরের আবার ব্যাখ্যা, “মার্চের শেষ থেকে মে পর্যন্ত গরমের জন্য শিবির কম হয়। যে শিবিরগুলি হয় সেখানেও পর্যাপ্ত রক্তদাতা মেলে না। এই সময়ে কোনও শিবিরে রক্ত দেওয়ার পরে হাতে পাওয়া ক্রেডিট কার্ড নিয়ে হাসপাতালে গেলেও বিনিময়ে অনেক সময়ে রক্ত পান না। তার ফলেও অনেকে রক্তদানে আগ্রহ হারান। স্বজনদের প্রয়োজনের সময়ে সরাসরি গিয়ে রক্ত দিয়ে আসার সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন অনেকে।’’ এ ছাড়া দালাল চক্রের রমরমার কারণেও প্রয়োজনের সময়ে রক্ত না পেয়ে শিবিরে দান করায় আগ্রহ কমছে বলে তাঁদের দাবি।
আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানান, ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন (হু)-এর লক্ষ্য, ২০২০ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছেই সমস্ত রক্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে এখনও অবধি সেই ভাবে পাওয়া রক্ত ৭৪ শতাংশ। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে দুঃস্থদের সঙ্কটে পড়তে হবে। তাই আমরা প্রচারের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে চাই।”