শিশুশ্রম রুখতে জরুরি প্রচার

এই প্রবণতাকে রুখতে সরকারের আরও বেশি ‘সক্রিয় প্রচারের’ দাবিও জানিয়েছেন নাগরিকেরা। কেতুগ্রামের কাঁদরার বাসিন্দা বশির শেখ বলেন, ‘‘আমরা অনেক সময়েই দেখি, শিশু শ্রমিকদের।

Advertisement

প্রণব দেবনাথ

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০০:১২
Share:

আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরে ডোকরাপাড়ায় কাদা-মাটি নিয়ে ব্যস্ত দুই খুদে। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

শিশুশ্রম রুখতে জরুরি প্রচার

Advertisement

প্রণব দেবনাথ

Advertisement

কাটোয়া

শিশু শ্রমিক আর সে ভাবে দেখা যায় না পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমায়, এমনই দাবি শ্রম দফতরের। কিন্তু মহকুমার নানা প্রান্তের বাসিন্দা, সমাজকর্মীদের একাংশের অভিজ্ঞতা, এখনও নানা ক্ষেত্রে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে শিশুশ্রমিকদের। এ প্রসঙ্গে তাঁরা মূলত দায়ী করছেন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে। তাঁদের মতে, শিশুশ্রম রুখতে প্রশাসনের প্রচারেও খামতি রয়েছে।

পানুহাট মাছ বাজারের ক্রেতারা জানান, সেখানে কয়েকজন নাবালককে মাংসের দোকানে কাজ করতে দেখা যায়। একই ভাবে, কাটোয়া স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড চত্বরে পিঠে বস্তা নিয়ে কিছু নাবালককে কাগজ ও খালি জলের বোতল কুড়োতেও দেখা যায়। তেমনই এক নাবালক জানায়, তার রোজগারেই সংসার চলে। নিজে অল্প কিছু টাকা রেখে বাকিটা মাকে দেয়। শহরের কিছু খাবারের দোকানেও একই চিত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেমনই এক ব্যবসায়ীও বলেন, ‘‘আমরা চাই না। কিন্তু গরিব পরিবার থেকে আসা বাবা-মায়েদের অনেকেই বাচ্চাদের কাজে নেওয়ার জন্য বলেন। এতে তাঁদেরও সুরাহা হয়।’’

পাশাপাশি, কাটোয়া, দাঁইহাট এবং নানা ব্লকের ইটভাটাগুলিতেও শিশুশ্রমের দৃষ্টান্ত দেখা যায় বলে দাবি। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটার ম্যানেজার বলেন, ‘‘যে সব ছেলেমেয়েরা ভাটায় রয়েছে, তারা শ্রমিকদেরই সন্তান। কোথাও নাবালকদের কাজে লাগানো হয় না।’’

এই দৃষ্টান্তগুলির কথা শুনে শিশুশ্রমের প্রধান কারণ যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, তা মনে করছেন অর্থনীতিবিদরাও। ইউনিসেফের ‘চাইল্ড লেবার ইন ইন্ডিয়া’ নিবন্ধেও দারিদ্রকেই শিশুশ্রমের মূল কারণ হিসেবে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামী মনে করেন, ‘‘অর্থনৈতিক বাধ্যবাধ্যকতা শিশুশ্রমের অন্যতম কারণ। এটা রুখতে হলে জনহিতকর প্রকল্প আরও বেশি করে জনসাধারণের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে।’’

এই প্রবণতাকে রুখতে সরকারের আরও বেশি ‘সক্রিয় প্রচারের’ দাবিও জানিয়েছেন নাগরিকেরা। কেতুগ্রামের কাঁদরার বাসিন্দা বশির শেখ বলেন, ‘‘আমরা অনেক সময়েই দেখি, শিশু শ্রমিকদের। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ করব, বুঝতে পারি না। প্রশাসনের উচিত কোনও ‘টোল-ফ্রি’ নম্বর দেওয়া।’’ সমাজকর্মী সুব্রত সাঁইয়ের প্রস্তাব, ‘‘প্রশাসনের আরও বেশি করে প্রচার করা উচিত। যদি, কোনও দল তৈরি করা যায়, তা হলে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে।’’ পাশাপাশি, ‘শিশু শ্রমিকদের’ অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করানোরও পরামর্শ দেন ভাস্করবাবু।

ইউনিসেফের ওই প্রবন্ধে শিশুশ্রমের আরও একটি কারণ হিসেবে নিরক্ষরতাকেও দায়ী করা হয়েছে। এ বিষয়ে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরে পাঁচটি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি, ভাতার ব্যবস্থাও রয়েছে। শহরে তাই শিশুশ্রম হয় না।’’

একই দাবি করেও সহকারী শ্রম কমিশনার (কাটোয়া) তপনকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কিছু ভাটা ও খাবারের দোকানে শিশু শ্রমিকদের কাজে লাগানোর কথা শুনেছি। ফের অভিযান চলবে।’’ অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন কাটোয়া ‘চাইল্ড লাইন’-এর টিম লিডার অরূপ সাহাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন