কারও স্বপ্নে ম্যানচেস্টার, কেউ মজেছে সাইনার ব্যাডমিন্টনে

রাতে এক বার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলা না দেখলে ঘুম আসে না তার। দিনেও সুযোগ পেলেই টিভিতে একটু ফুটবল খেলা দেখে নেয় সে। মঙ্গলবার অবশ্য এ সব কিছুই টেনশন কমাতে পারছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০১:২৬
Share:

উপরে, কাটোয়ার বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে কৌস্তভ। কালনায় স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে মনসিজ। নিজস্ব চিত্র।

রাতে এক বার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলা না দেখলে ঘুম আসে না তার। দিনেও সুযোগ পেলেই টিভিতে একটু ফুটবল খেলা দেখে নেয় সে। মঙ্গলবার অবশ্য এ সব কিছুই টেনশন কমাতে পারছিল না। সকাল থেকেই কাটোয়া সার্কাস ময়দানের শরৎপল্লির বাড়িটা কেমন থম মেরে ছিল। তবে টিভিতে মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থানাধিকারী হিসেবে কৌস্তভ রায় নামটা দেখতে পেয়েই লাফিয়ে উঠেছিলেন বাবা তাপসবাবু।

Advertisement

কাটোয়ার কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের ছাত্র কৌস্তভ ৬৮০ পেয়েছে মাধ্যমিকে। তাঁর ইচ্ছে চিকিৎসক হয়ে কাটোয়ার দুঃস্থ মানুষজনের পাশে দাঁড়াবে। ছেলের স্বপ্নে উড়ান জোগান তাঁর মা স্বাগতাদেবী। তিনিই জানান, ছেলেটা বড্ড গান ভালবাসে। আর ফুটবল তো ওর প্রাণ। কৌস্তভের পড়ার ঘরে গিয়ে দেখা যায়, দেওয়ার গিটার ঝোলানো রয়েছে। ফাঁক পেলেই মায়ের কাছে গিটার বাজানো শেখে সে। গিটারে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতেও ভালবাসে। আর ভালবাসে মায়ের রাঁধা মুরগির মাংস। মায়ের স্পেশ্যাল চিকেন কারি না হলে রবিবারটা জমে না তার। কৌস্তভই জানায়, শ্রীরামপুর ভারতীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপসবাবুই বরাবর ছেলেকে পড়াতেন। সাহায্য করতেন স্বাগতাদেবীও। এ দিন দু’জনেই বললেন, ‘‘ছেলের সাফল্যে আমরা খুব খুশি।’’ খুশি কৌস্তভের স্কুলের শিক্ষকেরাও। এ দিন স্কুলে যেতেই শিক্ষকেরা ঘিরে ধরেন তাকে। প্রধান শিক্ষক সুধীন মণ্ডল বলেন, ‘‘ওর সাফল্যে আমরা গর্বিত। স্কুলের ভাল ফলাফলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল ও।’’ বাংলার শিক্ষক মহাদেব বিশ্বাসও জানান, কৌস্তভ বরাবরই ঠান্ডা মাথার ছেলে। ক্লাসেও নিয়মিত। তাপসবাবু জানান, ছেলের পড়াশোনার জন্য বর্ধমানে থাকছেন তাঁরা। ওখান থেকেই চিকিৎসক হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে সে। এ দিন কাটোয়ার বিদায়ী বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে এসে শুভেচ্ছা জানান কৌস্তভকে। কাটোয়া থানার তরফেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কৌস্তভ বলে, ‘‘এতটা ভাল রেজাল্ট হবে ভাবিনি। এ বার আরও খাটব।’’

স্কুলে শিক্ষক-সহপাঠীদের সংবর্ধনা পূর্বস্থলীর মৈত্রীশকে।নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

সপ্তম স্থান পাওয়া কালনার মনসিজ রায়ের সকালটা আবার শুরু হয়েছিল অন্যরকম ভাবে। রোজকার মতোই টিউশনে গিয়েছিল সে। রেজাল্টের টেনশন থাকলেও পড়া কামাই করতে চায়নি। সেখানেই এক বন্ধু ফোন করে খবরটা জানায় তাকে। তড়িঘড়ি বাড়ি ফেরে মনসিজ। ততক্ষণে স্কুলের ফোনে বাড়ির সবাই রেজাল্ট জেনে গিয়েছে। টিভিতে দেখে পড়শিরাও ভিড় করেছেন বাড়িতে। ছেলে ফিরতেই বাবা-মা খুশিতে জড়িয়ে ধরেন তাকে।

কালনার অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে ৬৭৭ পেয়েছে মনসিজ। তাঁর স্বপ্ন, বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়র হওয়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পড়তেও ভালবাসে সে। তবে সবচেয়ে ভালবাসে ব্যাডমিন্টনের কোর্টে সাইনা নেহেওয়ালের খেলা দেখতে। এ দিন দশটা নাগাদ স্কুলে যেতেই তাকে ঘিরে ধরে নিচুক্লাসের ছেলেরা। শিক্ষকেরাও আদর করেন প্রিয় ছাত্রকে। মনসিজ জানায়, ইতিহাস, ভূগোলে কোনও শিক্ষক ছিল না তার। স্কুলের মাস্টারমশাইরাই সাহায্য করেছেন। তাঁর বাবা মনোজবাবু ও মা নন্দিতাদেবীও জানান, টেস্টের ফল বেরোনোর পরে স্কুলের শিক্ষকেরা ছেলেকে সবসময় উৎসাহ দিতেন। তাঁদের জন্যই এই সাফল্য। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশালাক্ষ সেন বলেন, ‘‘গোটা স্কুল মনসিজের জন্য গর্বিত।’’

মনসিজের সঙ্গে ৬৭৭ পেয়ে সপ্তম হয়েছে পূর্বস্থলীর বৈদিকপাড়ার বাসিন্দা মৈত্রীশ ঘোষও। পূর্বস্থলী নীলমণি ব্রহ্মচারী ইনস্টিটিউশন থেকে পরীক্ষায় বসেছিল সে। মৈত্রীশের বাবা ওই স্কুলেরই সহকারী প্রধান শিক্ষক। মা মৌসুমিদেবীও স্থানীয় সাবিত্রী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। শিক্ষক দম্পত্তির বড় ছেলে মৈনাকও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম দশের মধ্যে ছিল। মৈত্রীশ জানায়, পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকতে এবং গান শুনতে ভালোবাসে সে। তার পছন্দের গায়ক অরিজিৎ সিং। ভালবাসে ক্রিকেট খেলতেও। আইপিএলে তার পছন্দের টিম কেকেআর। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায় সে। মৈত্রীশ বলে, ‘‘খেলা দেখেছি। গান শুনেছি। পড়াশোনাও করেছি। আরও পরিশ্রম করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন