নজর সরলেই ‘বেনিয়ম’ নার্সিংহোমে

বেনিয়ম ধরা পড়েছে আগেও। শিশু বিক্রির অভিযোগ সামনে আসায় ফের প্রমাণ হয়ে গেল, নার্সিংহোমগুলি কতটা ‘নজরহীন’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি

বেনিয়ম ধরা পড়েছে আগেও। শিশু বিক্রির অভিযোগ সামনে আসায় ফের প্রমাণ হয়ে গেল, নার্সিংহোমগুলি কতটা ‘নজরহীন’।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশও একান্তে মেনে নিচ্ছেন, যে ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। বর্ধমান শহরের আঁকে-বাঁকে গজিয়ে ওঠা নার্সিংহোমগুলির বেনিয়ম ধরা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোসবাগানের একটি নার্সিংহোম বন্ধ করার নোটিস দিয়েছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)। তা বন্ধ করতে পারেনি স্বাস্থ্য দফতর। সেখানে শিশু পাচার চক্র রুখবে কী ভাবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। এক কর্তার কথায়, “এত চেষ্টা করেও সফল হওয়া যাচ্ছে না।’’

জেলাশাসক বিজয় ভারতী সোমবার বলেন, “নার্সিংহোমগুলির বেনিয়ম ধরার জন্য ফের স্বাস্থ্য দফতরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হবে। আর যে নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচারের অভিযোগ উঠেছে, সেই নার্সিংহোম নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর ও নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানের বেশ কিছু নার্সিংহোমে সাধারণ স্নাতক ডিগ্রি পাওয়া ছাত্রও এমবিবিএস হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বিহারের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভুয়ো এমবিবিএস ডিগ্রি জোগাড় করে ‘সার্জেন’ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে নার্সিংহোম তৈরি করে দালালদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। যেমন ভাঙাকুঠির ওই নার্সিংহোমের টেকনিশিয়ান পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ। অথচ বর্ধমানের বেশ কিছু নার্সিংহোমে টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। পুলিশের ধারণা, কাজের ফাঁকেই শিশু পাচারের চক্র জুড়ে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। আগেও তিনি শিশু পাচার করেছেন বলে দাবি পুলিশের।

বর্ধমান শহরের বেশ কিছু নার্সিংহোম ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট’ শংসাপত্র ছাড়াই চলছে, সে কথা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা যায়। মাঝেমধ্যে অভিযান হলেও ওই সব নার্সিংহোমগুলি বন্ধ হয় না। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, যে সব নার্সিংহোমগুলি নতুন শংসাপত্র পাওয়ার জন্য বা পূনর্মূল্যায়ণ করার জন্য নথি জমা দেয়, সেই সব নার্সিংহোমেই তদন্তকারী দল পাঠানো হয়। বাকি নার্সিংহোমগুলির ‘বেনিয়ম’ ধরার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর চুপ। এমনকি, নবাবহাট বা খোসবাগান এলাকায় গজিয়ে ওঠা একাধিক নার্সিংহোমে কারা চিকিৎসা করেন, সে তথ্যও স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নেই।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দাবি, “চিকিৎসকদের একাংশের মদত রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর কিছু ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে। আর সেই সুযোগে নানা রকম বেআইনি কাজকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে নার্সিংহোমগুলি।’’ বর্ধমানের নার্সিংহোমগুলির সংগঠনের সম্পাদক শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিক। সব নার্সিংহোমে নিয়মিত অভিযান চালাক, সেখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন