খুঁটি তোলার কাজ চলছে। ইতিউতি গর্ত মাঠে। রবিবার দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়াম। ছবি: বিকাশ মশান।
এই মাঠে একসময় এসেছিলেন সুনীল গাওস্কার, কপিল দেব, সচিন তেন্ডুলকারেরা। এই মাঠে খেলে গিয়েছে মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিংয়ের মতো দল।
সেই মাঠ, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) নেহরু স্টেডিয়ামে খেলাধুলোর চর্চা প্রায় উঠেই গিয়েছে বলে অভিযোগ সিটু অনুমোদিত ‘হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর। সংগঠনটির আরও অভিযোগ, শনিবার এখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার মাধ্যমে খেলার এই মাঠ আসলে তুলে দেওয়া হল রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য!
ওই সংগঠনের নেতৃত্ব জানান, প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য স্টেডিয়ামটি ব্যবহার করা নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়েছিল তাঁরা। গত ৩১ জানুয়ারি সেই মর্মে ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপিও দেয় সংগঠনটি। সেই স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়, অতীতে স্টেডিয়ামটি শুধু ক্রীড়াক্ষেত্রের জন্যই ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি, কারখানার গেটে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে বিক্ষোভও দেখায় সংগঠনটি।
কিন্তু তার পরেও শনিবার সভা ওই স্টেডিয়াম মাঠেই সভা হয়েছে। রবিবার স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, খুঁটি তোলার কাজ চলছে জোরকদমে। ইতিউতি গর্ত মাঠে। এবড়োখেবড়ো চারদিক।
তবে মাঠ ব্যবহারে তাদের আপত্তির নানা কর্মসূচির কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় শ্রমিক সংগঠনটি। সোশ্যাল মিডিয়াতেই ডিএসপি-র ওই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সৌরভ দত্ত অভিযোগ করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের কথা বলে কেউ এক জন আমাকে ফোন করেন। মাঠের বিষয়ে পুরো পরিস্থিতি, আমাদের অবস্থান কী, তা জানতে চান।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এই স্টেডিয়ামে বিখ্যাত ক্রীড়া ব্যক্তিত্বেরা এসেছেন। জাতীয় স্তরের অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা হয়েছে। এমন স্টেডিয়াম ও মাঠকে রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য কেন অনুমতি দেওয়া হল? মাঠ আগের অবস্থায় ফেরাতে খরচই বা কে দেবে? এর পরে ভবিষ্যতে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলও কর্মসূচির জন্য স্টেডিয়াম চাইতে পারে।’’
এই ঘটনায় ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে ডিএসপি যে একেবারেই উদাসীন, তা ফের প্রমাণ হল, মনে করছেন শহরের ক্রীড়াপ্রেমীদের একাংশ এবং ওই শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বের একাংশ। তাঁরা জানান, অতীতে ডিএসপি-র পৃষ্ঠপোষকতায় ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, টেবিল টেনিস খেলে অনেকেই জাতীয় স্তরে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু এখন আর এই সব খেলায় আন্তঃইস্পাত প্রতিযোগিতাতেও দল পাঠান না ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। দুর্গাপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক তাপস সরকারের সংশয়, ‘‘স্টেডিয়াম ক্রীড়া সংস্কৃতির প্রসারে ব্যবহৃত হওয়া উচিত। রাজনৈতিক সভা বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান মাঠের ক্রীড়া-ঐতিহ্যকেই নষ্ট করে। মাঠের ক্ষতি হলে সমস্যায় পড়েন খেলোয়াড়েরা।’’
তবে ডিএসপি শ্রমিকদের একাংশের দাবি, কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছেন, শনিবার শুধু রাজনৈতিক সভা নয়, ছিল সরকারি অনুষ্ঠানও। ওই দিন রেলের তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা ও দুর্গাপুর পূর্বের বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ও। যদিও দু’জনের কেউই অনুষ্ঠানে যাননি। সৌরভবাবুদের অভিযোগ, তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচি দেখে তড়িঘড়ি রেলের প্রকল্প উদ্বোধনের ব্যবস্থা করিয়ে বিজেপি-র দলীয় সভাটিকে ‘সরকারি’ আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিধায়ক সন্তোষবাবু বলেন, ‘‘রেলের যে প্রকল্পের উদ্বোধন এখান থেকে প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তা করার জন্য দুর্গাপুরে আসার দরকার ছিল না। কারণ, একটি প্রকল্পও দুর্গাপুরের নয়। আমাদের অনুমান, দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতেই এই পরিকল্পনা।’’
যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায়ের বক্তব্য, ‘‘শুধু যে রাজনৈতিক সভা হয়েছে, তা ঠিক নয়। তার আগে রেলের অনুষ্ঠানও ছিল। খেলাধুলোর উন্নয়নের বিষয়েও কারখানা সবসময় চেষ্টা করে।’’