আসানসোলে বাকি ৪৭ হাজার শৌচাগার, বর্ধমানে সাড়ে ছ’হাজার

‘নির্মল’ হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে শহর

‘নির্মল ব্লক’ ঘোষণার অনুষ্ঠানে বুদবুদে গিয়ে জেলার এক কর্তা দাবি করেছিলেন, ‘এই ব্যাপারে শহরকে পিছনে ফেলে গ্রাম এগিয়ে যাচ্ছে’। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের আউশগ্রাম ২ ব্লকের কয়েকটি সংসদ এলাকায় শৌচাগার তৈরি হয়নি বলে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভের জেরে ওই ব্লককে ‘নির্মল’ ঘোষণার আয়োজন করেও পিছিয়ে আসতে হয় প্রশাসনকে। প্রশ্ন ওঠে তাহলে কী অন্য ব্লকের অবস্থাও এক?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

‘নির্মল ব্লক’ ঘোষণার অনুষ্ঠানে বুদবুদে গিয়ে জেলার এক কর্তা দাবি করেছিলেন, ‘এই ব্যাপারে শহরকে পিছনে ফেলে গ্রাম এগিয়ে যাচ্ছে’। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাশের আউশগ্রাম ২ ব্লকের কয়েকটি সংসদ এলাকায় শৌচাগার তৈরি হয়নি বলে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। বিক্ষোভের জেরে ওই ব্লককে ‘নির্মল’ ঘোষণার আয়োজন করেও পিছিয়ে আসতে হয় প্রশাসনকে। প্রশ্ন ওঠে তাহলে কী অন্য ব্লকের অবস্থাও এক?

Advertisement

এ দিনই তড়িঘড়ি সমস্ত পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বর্ধমান উত্তরের মহকুমাশাসক মুফতি মহম্মদ শামিম। কোথায় শৌচাগার তৈরি বাকি রয়েছে, কেন হয়নি তার বিস্তারিত রিপোর্ট নেন। হাতে গোনা কয়েকটি সংসদ ছাড়া পঞ্চায়েত প্রধানরা জানান, সব জায়গাতেই শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে কিংবা কাজের বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কথায়, ‘‘আউশগ্রামের কয়েকটি সংসদ বাদে সব জায়গা নির্মল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। আউশগ্রামেও কয়েকদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রামীণ এলাকা ‘নির্মল’ হযে যাবে।’’

তবে পঞ্চায়েত নির্মল হলেও প্রশাসনের মাথাব্যথা পুরসভাগুলিকে নিয়ে। বেশিরভাগ পুরসভায় শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও ছুঁতে পারেনি। বর্ধমান জেলার ২টি কর্পোরেশন ও ৮টি পুরসভার মধ্যে শুধু কালনাকে নির্মল ঘোষণা করতে পেরেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, শৌচাগার তৈরিতে কাটোয়া পুরসভাও লক্ষ্যপূরণ করার দিকে এগিয়ে রয়েছে। তবে একমাত্র বিরোধী পুরসভা দাঁইহাটে সোমবার যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে, তা অসঙ্গতিতে ভরা। ওই রিপোর্টে রয়েছে, ৭৯৩টি শৌচাগারের মধ্যে ২৮২টি শৌচাগার করতে পেরেছে পুরসভা। শৌচাগার তৈরির ২১ লক্ষ টাকা পেলেও তা খরচ করা হয়নি বলে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

এ ছাড়া জেলার অধিকাংশ শহরেই এখনও রেললাইন বা নদীর ধারে উন্মুক্ত শৌচাগার রয়েছে। পরিস্থিতি শোধরানো ও দূষণ কমানোর লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে নানা প্রকল্প এসেছে, কিন্তু পুরসভাগুলি রয়েছে তিমিরেই। এর সঙ্গে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার। যার হিসেবও সরকারি স্তরে অমিল। প্রশাসনের হিসেবে অক্টোবর পর্যন্ত বর্ধমানের সব পুরসভা মিলিয়ে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৮১ হাজার ৯৪৫টি। তাও বস্তির হিসেব নেই এর মধ্যে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত ও পুরসভা) রত্নেশ্বর রায় জানান, মঙ্গলবার ওই সব পুরকর্তাদের নিয়ে ফের বৈঠক করা হবে। কেন ও কী জন্য পুরসভাগুলি শৌচাগার তৈরিতে পিছিয়ে পড়ছে তা জানার চেষ্টা হবে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, আসানসোল পুরসভায় ৪৭ হাজার, বর্ধমান ৬৫৪৭, দুর্গাপুরে ১৪ হাজার ৫৩৯, গুসকরা পুরসভায় ২৮২১ ও মেমারিতে ৭৮০টি পরিবারে শৌচাগার করতে হবে। হয়নি কেন? আসানসোলের পুরসচিব প্রলয় সরকার বলেন, “এখনও প্রায় ৫০ হাজার শৌচাগার তৈরি করতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় শৌচাগার তৈরির জন্য স্যানিটারি মার্ট রয়েছে। কিন্তু সংযোজিত এলাকা নিয়ে গঠিত আমাদের পুরসভায় কারা শৌচাগার তৈরি করবে, সেটা ঠিক করতেই সময় পার হয়ে গিয়েছে।” বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “জায়গা পাওয়াটা বড় সমস্যা।” তবে জানুয়ারির মধ্যে শহরকে ‘নির্মল’ করা হবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন