আধারের ভুয়ো ক্যাম্প, অভিযুক্ত ক্লাব

কার্ড পাওয়ার কথা নিখরচায়। পঞ্চায়েত সদস্যের মুখে বা মাইকে প্রচারে খবর পেয়ে নির্দিষ্ট ক্যাম্পে গিয়ে তা করাতে হয়। কিন্তু, এলাকার ক্লাবের কয়েকজনের কথা শুনে কিছু বাসিন্দা গিয়েছিলেন আধার কার্ডের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে। অভিযোগ, বাইরে থেকে আসা কিছু লোকজন মাথা পিছু দু’শো টাকা করে নিয়ে খাতায় নাম তোলে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

অন্ডাল শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০১:১৮
Share:

এই ক্লাবেই ক্যাম্প হচ্ছিল বলে অভিযোগ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

কার্ড পাওয়ার কথা নিখরচায়। পঞ্চায়েত সদস্যের মুখে বা মাইকে প্রচারে খবর পেয়ে নির্দিষ্ট ক্যাম্পে গিয়ে তা করাতে হয়। কিন্তু, এলাকার ক্লাবের কয়েকজনের কথা শুনে কিছু বাসিন্দা গিয়েছিলেন আধার কার্ডের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে। অভিযোগ, বাইরে থেকে আসা কিছু লোকজন মাথা পিছু দু’শো টাকা করে নিয়ে খাতায় নাম তোলে। কিন্তু প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছেছে শুনেই যন্ত্রপাতি গুটিয়ে চম্পট দেয় তারা।

Advertisement

অন্ডালের কাজোড়ায় আধার কার্ড করানোর নামে এ ভাবে প্রতারিত হয়েছেন বেশ কিছু বাসিন্দা। তাঁদের দাবি, ওই ক্লাবের সদস্যেরা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত। সে কারণেই তাঁরা বিশ্বাস করে গিয়েছিলেন কার্ড করাতে। পুলিশে কোনও অভিযোগ না হলেও গোটা ঘটনা নিয়ে কাজোড়া পঞ্চায়েতের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে ব্লক প্রশাসন। ক্লাবটির দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

মাস কয়েক আগে মালদহের চাঁচলেও আধার কার্ড দেওয়ার নামে এ ভাবে টাকা আদায়ের চক্রের খবর পেয়েছিল প্রশাসন। সে জন্য এলাকার মানুষজনকে সতর্কও করা হয়। বর্ধমান জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কী ভাবে আধার কার্ড করানো যাবে, সে ব্যাপারে বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবের সুযোগ নিচ্ছে প্রতারকেরা।’’

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, ক্লাবটির কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচিলে ঘেরা অ্যাসবেস্টসের চালের ওই পাকা ঘরের ক্লাবটির সদস্য এলাকারই কিছু যুবক। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক দিন ধরে ওই সদস্যেরা মুখে-মুখে প্রচার করছিলেন, দু’শো টাকার বিনিময়ে তাঁদের ক্লাব আধার কার্ড করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। যাঁরা টাকা জমা দেবেন, একটি এজেন্সি মারফত সাত দিনের মধ্যে কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ক্লাবের সামনে সামিয়ানা টাঙানো হয়। রবিবার সেখানে আসেন জনা পাঁচেক বহিরাগত। সঙ্গে ছিল ল্যাপটপ, ক্যামেরা, কাগজপত্র। বাসিন্দাদের দাবি, কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, ওই বহিরাগতেরা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। স্থানীয় খনিকর্মী বসন্ত সোয়াই, সোমেশ রাম, রাজেন্দ্র কাহাররা বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি কার্ড পেয়ে যাব শুনে ওখানে গিয়েছিলাম। টাকা দিয়ে নাম লিখিয়ে আসি। আমাদের ছবি তুলে নেওয়া হয়।’’ কিন্তু কোনও স্লিপ দেওয়া হয়নি বলে তাঁদের দাবি।

সোমবারও সেই কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ চলার পরেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। অন্ডালের বিডিও মানস পাণ্ডা জানান, এলাকা সূত্রে তিনি খবর পান, ভুয়ো আধার কার্ডের একটি ক্যাম্প চলছে কাজোড়ায়। পঞ্চায়েতকে খবর নিতে বলেন তিনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজোড়া পঞ্চায়েতের এক প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বহিরাগতদের কাছে তাদের সংস্থার বৈধ নথিপত্র দেখতে চান। তার পরেই পাততাড়ি গুটিয়ে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় তারা। বিডিও বলেন, ‘‘এই খবর পেয়েই আমি অন্ডাল থানায় খবর দিই।’’

পুলিশ জানায়, তারা বিডিও-র কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। কোনও তরফে কোনও লিখিত অভিযোগ না হওয়ায় এই ঘটনায় কোনও মামলা রুজু করা যায়নি বলে পুলিশের দাবি। বিডিও অবশ্য বলেন, ‘‘আমি পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টকে ঘটনার বিশদ রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিতে বলেছি। তা পাওয়া গেলে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।’’ জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

কাজোড়ার বাসিন্দা, সিপিএম নেতা মলয় বসুরায়ের অভিযোগ, ‘‘ওই ক্লাবটি তৃণমূলের লোকজনের বলেই সবাই জানে।’’ ওই ক্লাবের সদস্যেরা অবশ্য গোটা ঘটনার কথা অস্বীকার করছেন। ক্লাবের সম্পাদক সঞ্জিত ওরাং দাবি করেন, ‘‘আমাদের ক্লাবে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’ তৃণমূল যদিও এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্কের কথা মানতে চায়নি। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, ওই ক্লাবের সদস্যেরা স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য রূপেশ যাদবের অনুগামী বলে পরিচিত। রূপেশবাবু শুধু বলেন, ‘‘কেউ অন্যায় করে থাকলে প্রশাসন তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’’ তৃণমূলের দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের লোকজন দলের কেউ নয়। দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু করা যাবে না। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’

পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে খবর পাওয়ার পরে তল্লাশি শুরু হয়েছে। কারা জড়িত তা জানার পরে নির্দিষ্ট নাম ধরে মামলা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন