ত্রিফলা সেরেছে, তড়িঘড়ি রঙের পোঁচে সাজছে শহর

সোমবার বিকেল। বর্ধমান পুরসভায় বৈঠক করছিলেন কাউন্সিলরেরা। হঠাৎ পুরপিতা পরিষদের এক সদস্যের কাছে ফোন প্রশাসনের এক কর্তার। ফোনের ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল, “হাতে দু’দিন সময়। সব গুছিয়ে ফেলতে পারবেন তো? যাওয়ার পথে ম্যাডাম যেন খুশি হন।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৯
Share:

বাঁ দিকে, তিনকোনিয়ায় ডিভাইডারে রঙের প্রলেপ। ডান দিকে, চলছে জিটি রোড সাফাই। নিজস্ব চিত্র।

সোমবার বিকেল। বর্ধমান পুরসভায় বৈঠক করছিলেন কাউন্সিলরেরা। হঠাৎ পুরপিতা পরিষদের এক সদস্যের কাছে ফোন প্রশাসনের এক কর্তার। ফোনের ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল, “হাতে দু’দিন সময়। সব গুছিয়ে ফেলতে পারবেন তো? যাওয়ার পথে ম্যাডাম যেন খুশি হন।”

Advertisement

ফোন কাটতে না কাটতেই ফের ফোন, “এখনও তো শহরের রাস্তায় ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ ব্যানার-হোর্ডিং কিছুই পড়ল না। হেলমেট নিয়েও প্রচারো করা হয়নি। আদৌও হবে তো! ঠিক, করে বলুন তো?” এ বার এ প্রান্ত থেকে ওই সদস্য বললেন, “সব হয়ে যাবে স্যার। কোনও চিন্তা করবেন না। আপনাকে কী মিথ্যা কথা বলছি।”

কাল, শুক্রবার শহরে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তারই তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনিক মহলে। রাস্তা পরিষ্কার, ডিভাইডারে রং, ত্রিফলা বাতির সংস্কার— চোখের নিমেষে সেজে উঠেছে শহর। বর্ধমানের পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “আলো বিভাগের দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলরকে বলেছি, একটু আগেভাগে ত্রিফলাগুলিকে জ্বালিয়ে রেখো। যাওয়ার সময় যাতে দিদির চোখে পড়ে।”

Advertisement

কলকাতার মতো বর্ধমান শহরেও সৌন্দর্যায়নের জন্য ভোটের আগে কালীঘাটের এক সভায় নির্দেশ দেওয়া হয় পুরপ্রধানে। নির্দেশ পালন করতে গিয়ে বর্ধমানের বিধায়ক তথা বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের (বিডিএ) সভাপতি রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কোপেও পড়ে পুরসভা। এখন ভোট মিটে গিয়েছে। বিডিএ এবং পুরসভার ‘ভাব’ও হয়েছে। শহরের ভিতর জিটি রোড সাজানোর কাজও শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে গতি বেড়ে গিয়েছে সেই প্রস্তুতিতেই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শততম প্রশাসনিক সভা সেরেছিলেন বর্ধমানে। বিধানসভা ভোটের আগে ‘মাটিতীর্থ, কৃষিকথা’র আসরে এসেছিলেন। পুলিশ লাইনেও সভা করেছিলেন। এ বার দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়ায় অবশ্য জনসভা নয়, এ জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করবেন তিনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর থেকে শুক্রবার বিকেল তিনটে নাগাদ বর্ধমান শহরে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। বোলপুর থেকে ইলামবাজার সেতু পেরিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হয়ে বর্ধমানে ঢুকবেন তিনি। কিন্তু বর্ধমান শহরের ভিতর নবাবহাট দিয়ে তাঁর গাড়ি ঢুকবে না কি উল্লাস মোড় দিয়ে ঢুকবে— তা এখনও মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা ঠিক করে উঠতে পারেননি। ফলে সাজো সাজো রব সব দিকেই। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “আমরা তৈরি আছি। যে দিকে বলবেন, সেই দিক দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আনা হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াতের পথে হাজার খানেক পুলিশ থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী যাতায়াতের সময় ছাড়া বাকি সময় জিটি রোড খোলা থাকবে। সুষ্ঠু ভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও আশ্বাস পুলিশ কর্তাদের।

জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক সভা হবে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে। সেখানে নীল-সাদা কাপড় দিয়ে ম্যারাপ তৈরি করা হচ্ছে। নতুন করে রংয়ের পোচও পড়ছে। ওই এলাকার বাইরে জিটি রোডের ডিভাইডারের গ্রিলগুলিতে নীল-সাদা রং করা হচ্ছে। ডিভাইডারে লাগানো গাছগুলি তুলে নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে। রাস্তায় জমে থাকা আবর্জনাও সাফ হচ্ছে দ্রুত গতিতে। রাস্তা জুড়ে পড়েছে পথ সচেতনতার নানা পোস্টার। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে, প্রায় এক বছর ধরে খারাপ হয়ে থাকা ত্রিফলাগুলি গত কয়েক দিনে সংস্কার করা হয়েছে। বুধবার দেখা যায়, কেশবগঞ্জ থেকে উল্লাস মোড় পর্যন্ত জিটি রোডের দু’ধার ঝলমল করছে ত্রিফলায়।

ঘোড়দৌড় চটির এক ব্যবসায়ী বলেই ফেললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে ত্রিফলার আঁধার কাটল। আলোয় ফিরল জিটি রোড।”

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চলে যাওয়ার পরে দেখভালের অভাবে ত্রিফলা বাতি আবার নিভে যাবে না তো? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন