Kalna

একসঙ্গে পুজোর কাজে প্রীতম, আখতারেরা

২০১৯ সালে ধাত্রীগ্রাম এলাকার ফুটবল মাঠে দুর্গাপুজো শুরু করে ‘ধাত্রীগ্রাম সম্প্রীতি’ নামে একটি সংস্থা। বর্তমানে এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ১৫ জন শিক্ষক-সহ এলাকার প্রায় ৭০ জন।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য , প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

আউশগ্রাম, কালনা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১০
Share:

ধাত্রীগ্রামের পুজোয় মণ্ডপ সাজানো। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

মণ্ডপে ঢুকতেই ছোট, বড় নানা মাপের মুখোশ রাখা। ফাইবার, রেক্সিন, থার্মোকল নিয়ে ছুটোছুটি করছেন ক্লাব সদস্যেরা। শুধু তো মণ্ডপসজ্জা নয়, মেলা, চার দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বও তাঁদেরই, জানান রাধারানি বসাক, নূর আহাদ শেখরা। তাঁর অধ্যুষিত ধাত্রীগ্রামে এই পুজো তাঁদের চার দিনের আনন্দ, একসঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকারও।

Advertisement

২০১৯ সালে ধাত্রীগ্রাম এলাকার ফুটবল মাঠে দুর্গাপুজো শুরু করে ‘ধাত্রীগ্রাম সম্প্রীতি’ নামে একটি সংস্থা। বর্তমানে এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ১৫ জন শিক্ষক-সহ এলাকার প্রায় ৭০ জন। পুজোর আগে বৈঠক করে কে, কোন বিভাগের দায়িত্ব সামলাবেন ঠিক করে নেন তাঁরা। মণ্ডপের তদারকি, চাঁদা তোলা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পী বাছাই, সবই করেন তাঁরা। এ বার পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন রঞ্জিত দেবনাথ, রাধারানি বসাক, অরুণা দে-রা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন নূর আহাদ শেখ, প্রীতম শেখ, উত্তম বসাকেরা। মেলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন জগা দে, তোতা মল্লিক, প্রশান্ত বাগের মতো কয়েকজন। আর মণ্ডপ তৈরি-সহ সামগ্রিক দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন গিয়াসউদ্দিন শেখ, আখতার আলি শেখ, রাজীব কুণ্ডু, দিলীপ বসাকেরা।

তাঁরা জানান, এ বারের থিম ‘দৃষ্টিতে নতুন সৃষ্টি’। মণ্ডপের নানা দিক থেকে উঁকি মারছে খোলা চোখ। মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে, মায়ের কোলই সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নিচু চাপাহাটি এলাকার শিল্পীরা তৈরি করছেন মণ্ডপটি। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, চতুর্থীতে পুজোর উদ্বোধন হবে। নবমী পর্যন্ত থাকবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুজো কমিটির সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘মায়ের চোখে সব ছেলেই সমান, এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে।’’ পুজো কমিটির সভাপতি তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘পুজো শুধু উৎসব নয়, সমাজের সব মানুষের এক হওয়ার মঞ্চ।’’

Advertisement

আউশগ্রামের অমরপুরের গোহালাড়া গ্রামের মণ্ডল পরিবারের পুজো একসময়ে পারিবারিক উৎসব ছিল। পরে তা সর্বজনীন রূপ পায়। কিন্তু গ্রামবাসীরাও পুজোর খরচ সামলাতে পারছিলেন না। এগিয়ে আসেন গেঁড়াইয়ের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল লালন। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর সরকারি অনুদানের টাকায় ওঁরা সামাজিক কাজ করবেন। আর পুজোর পুরো খরচ আমি বহন করব, কথা দিয়েছি। ওঁরা আমার আর্জিতে সম্মতি দিয়েছেন।’’ পুজোয় তিনি সপরিবার অঞ্জলি দেবেন বলেও জানিয়েছেন।

ওই গ্রামে প্রায় ১৫০ পরিবারের বাস। তাঁরা মূলত কৃষিজীবি ও দিনমজুর। গ্রামবাসী চন্দ্রমোহন পাল, তাপস মণ্ডল, প্রশান্তকুমার পাল, তারাপদ পালেরা বলেন, ‘‘অন্যবার প্রতিটি পরিবার নিজেরাই চাঁদা দিয়ে পুজো করত। এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে চাষাবাদ ঠিকমতো হয়নি। টাকার টানাটানিতে পুজোর খরচ সঙ্কুলান করা যাচ্ছিল না। পাশের গ্রামের ওই ব্যবসায়ী এগিয়ে আসায় অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েছি আমরা।’’ উদ্যোক্তারা জানান, পুজোয় প্রতিদিন ১৫-১৬টি করে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। পুজোর সঙ্গে যুক্ত গ্রামের একাধিক পরিবারের কাছে কমিটির তরফে সেই নৈবেদ্য পাঠানো হয়। এ বছর নৈবেদ্য যাবে লালনের বাড়িতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন