আচমকা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত

কারখানার বর্জ্যে জলদূষণের নালিশ

খানিক বৃষ্টি হলেই নর্দমার জল উপচে আসে রাস্তায়। নর্দমার নোংরা-সহ রাস্তার সেই জল গিয়ে পড়ে দামোদরে। কারখানার রাসায়নিক ও বর্জ্য মেশা জল যে নর্দমা দিয়ে যায়, এক পরিস্থিতি হয় সেগুলির ক্ষেত্রেও। দামোদরের জল পরিশোধন করেই সরবরাহ করা হয় বাসিন্দাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৬
Share:

রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের জল মেশে এই ক্যানালে। —নিজস্ব চিত্র।

খানিক বৃষ্টি হলেই নর্দমার জল উপচে আসে রাস্তায়। নর্দমার নোংরা-সহ রাস্তার সেই জল গিয়ে পড়ে দামোদরে। কারখানার রাসায়নিক ও বর্জ্য মেশা জল যে নর্দমা দিয়ে যায়, এক পরিস্থিতি হয় সেগুলির ক্ষেত্রেও। দামোদরের জল পরিশোধন করেই সরবরাহ করা হয় বাসিন্দাদের। কিন্তু বর্ষায় কারখানার রাসায়নিক মেশা জল কোথাও দামোদরে, কোথাও আবার পুরসভার শোধনাগারে জল যাওয়ার ক্যানালে গিয়ে পড়ে। ফলে, সেই শোধনাগার থেকে সরবরাহ করা জল কতটা বিশুদ্ধ সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী। পুরসভা সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, জল শুদ্ধ করার সামগ্রী বেশি পরিমাণে মেশানো হচ্ছে। গুণমান পরীক্ষা করেই সরবরাহ হচ্ছে।

Advertisement

শিল্পাঞ্চলের জলে রাসায়নিক ও ধাতব সামগ্রীর পরিমাণ তুলনায় বেশি থাকে। দুর্গাপুরে মাটির নীচের জল নিয়ে তেমন উদ্বেগের কারণ নেই, বছর দশেক আগে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল এমন তথ্য। মায়াবাজার, আশিসনগর, সগরভাঙা, গণতন্ত্র কলোনি, পলাশডিহার নলকূপ থেকে জলের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে পর্ষদ। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, পলাশডিহার জলে বেশি আয়রন ছাড়া অন্যত্র তেমন ধাতব উপাদান মেলেনি। কিন্তু শিল্পতালুক থেকে রাসায়নিক বর্জ্য মিশ্রিত জল মিশে নদীর জল বিপজ্জনক ভাবে দূষিত করছে বলে অভিযোগ।

শিল্পতালুক থেকে কারখানার জল কিছুটা শোধন করে বাইরে ছাড়ার কথা। কারখানার মালিকেরা বারবার দাবি করেন, বর্জ্য মেশা জল উপযুক্ত পরিশোধনের পরেই ছাড়া হয়। কিন্তু কারখানা থেকে বেরোনো নালা বা নর্দমায় জলের রং সেই দাবিকে সমর্থন করে না বলে শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ও ধাতব উপাদান থাকে ওই জলে। ক্লোরিন, সালফার ডাই-অক্সাইড, ফ্লুওরিন, সিলিকা, লেড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম, জিঙ্ক-সহ নানা উপাদান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ওই জলে, যা শুধু মানুষ নয়, জলজ প্রাণির জন্যও রীতিমতো বিপজ্জনক। নালা-নর্দমা দিয়ে বয়ে সেই জল মেশে দামোদরে।

Advertisement

সম্প্রতি পরপর কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের কারখানাগুলি থেকে বর্জ্য-জল বয়ে যাওয়ার নর্দমা উপচে যায়। ফলে, একাকার হয়ে গিয়েছিল অঙ্গদপুরে পুরসভার পরিশোধনাগারে জল যাওয়ার ক্যানাল ও কারখানার নর্দমা। সে দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের আধিকারিক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দূষিত জল পরিশোধনের জন্য অতিরিক্ত শুদ্ধিকরণ সামগ্রী ব্যবহার করে ও জলের গুণমান পরীক্ষা করেই সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন ডেপুটি মেয়র। কিন্তু বাসিন্দাদের উদ্বেগ কমেনি।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে কারখানা মালিকদের এক দফা সতর্ক করা হয়েছে। অবিলম্বে কারখানার বর্জ্য-জল নিয়ম মেনে শোধন করেই বাইরে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা জানান, সোমবার জেলা পরিকল্পনা ও নজরদারি বিভাগের বৈঠকে বিষয়টি তুলেছিলেন তিনি। ঠিক হয়েছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও কারখানা পরিদর্শকের দফতর আচমকা পরিদর্শনে যাবে। মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আলাদা ভাবে পরিদর্শন হবে। তার পরেও কাজ না হলে নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মহকুমাশাসক। কারখানা মালিকেরা অবশ্য দাবি করে, তাঁরা নিয়ম মেনেই কারখানা চালাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন