ইন্দিরা আবাস যোজনার তালিকায় নাম ছিল। ঘর তৈরির জন্য কয়েক কিস্তিতে সরকারি অর্থও পেয়েছেন। অথচ বহু উপভোক্তাই সে অর্থ পেয়ে ঘর তৈরি করেননি। কালনা১ ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় এমন দুর্নীতির খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে মহকুমা প্রশাসন। শুক্রবার মহকুমাশাসক (কালনা) নীতিন সিংহানিয়া বিডিও-কে সরকারি অর্থ যারা নয়ছয়ে অভিযুক্ত উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে পঞ্চায়েতগুলি যাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে, তার ব্যবস্থাও করতে বলেছেন মহকুমাশাসক।
এ দিন কালনা ১ ব্লকে বিভিন্ন সরকারি স্কিমের উপরে ছিল প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক। সেখানে মহকুমাশাসক ছাড়াও ছিলেন বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, এলাকার পঞ্চায়েত প্রধানেরা। ওই বৈঠকে উঠে আসে পঞ্চায়েতগুলিতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (যা আগে ছিল ইন্দিরা আবাস যোজনা) দুর্নীতির বিষয়টি। অভিযোগ, অনেক উপভোক্তাই একটা ইট না গেঁথেও দিব্যি হজম করে ফেলেছেন সরকারি অর্থ। এই দুর্নীতি চলে আসছে ২০১৩-’১৪ থেকে পর পর তিনটি আর্থিক বছরে। আগে এই প্রকল্পের জন্য তিনটি কিস্তিতে উপভোক্তারা পেতেন ৯৫ হাজার টাকা।
এ রাজ্যেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আদলে গীতাঞ্জলি প্রকল্প চালু হয়েছিল। সেটির নাম বদল হয়ে এখন তা ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প। এই প্রকল্পে উপভোক্তা পাকা বাড়ি তৈরির জন্য চার কিস্তিতে পাবেন ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ২০০ টাকা। কেন্দ্র বা রাজ্য, দুই আবাস প্রকল্পের ক্ষেত্রেই নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়ার পরে উপভোক্তা বাড়ির কাজ কতটা এগিয়েছেন, তার ছবি তুলে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে পৌঁছয় ব্লক কার্যালয়ে। এর পরেই উপভোক্তারা পান পরের কিস্তির অর্থ।
মহকুমা প্রশাসন জানতে পেরেছে, এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে দু’ভাবে। প্রথমত অনেকে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে ঘর তৈরির কাজই শুরু করেন নি। আবার অনেকে বাড়ির কাজ না শুরু করেও পেয়ে গিয়েছেন পরের কিস্তির অর্থ। সূত্রের খবর, খোদ মহকুমাশাসকই বৈঠকে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন, সিমলন-আটঘোরিয়া পঞ্চায়েতে একই ব্যক্তির নাম ইন্দিরা আবাস যোজনা এবং গীতাঞ্জলি প্রকল্পে থাকায়। এর পরেই তিনি দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের নামে থানায় অভিযোগ করার নির্দেশ দেন। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘যাঁরা সরকারি অর্থ নয়ছয় করেছেন, তাঁরা ছাড় পাবেন না। প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে বাড়ি না করেও যাঁরা দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেয়েছেন, এই সব ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক এবং এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে।’’
কালনা ১ ব্লকে রয়েছে মোট আটটি পঞ্চায়েত। ঠিক কত জন উপভোক্তা কোন কোন পঞ্চায়েতে কী ভাবে আবাস প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তার তালিকা অবশ্য বিডিও ক্ষুদিরাম সরেন দিতে পারেননি। তিনি জানান, জানান, এ ব্যাপারে বিশদে খোঁজ নেওয়া চলছে পঞ্চায়েতগুলিতে। তাঁর আরও দাবি, আটঘোরিয়া পঞ্চায়েতের একই উপভোক্তার দুই প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকলেও কোনটিরই টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে একটি প্রকল্প থেকে উপভোক্তার নাম বাদ দেওয়া হবে।
সুলতানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুর শেখ বলেন, ‘‘আমার এলাকায় একটি ক্ষেত্রে এক উপভোক্তার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। পরে যাঁর অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, তিনি টাকা ফেরত দিতে চাননি। অন্য আর এক জন আবার প্রথম কিস্তির টাকা কাজে লাগাননি। ওই দু’জনকেই টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। না দিলে মহকুমাশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী থানায় অভিযোগ জানানো হবে।’’ ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এফআইআর শেষ অস্ত্র। আগে ওই উপভোক্তাদের মৌখিক বলে দেখা হবে, তাঁরা শুধরোচ্ছেন কিনা। কারণ, ইতিমধ্যে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সরকারি অর্থে বাড়ি করবেন বলে।’’