ধান কেনায় অনিয়মের অভিযোগ

সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে ছিল এই সমবায় সমিতি। বর্ধমান ১-এর রায়ান ২ পঞ্চায়েতের ভিটা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি নামে সেই সমিতির বিরুদ্ধেই ধান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৪
Share:

চলছে তদন্ত। ভিটা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিতে। নিজস্ব চিত্র।

সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে ছিল এই সমবায় সমিতি। বর্ধমান ১-এর রায়ান ২ পঞ্চায়েতের ভিটা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি নামে সেই সমিতির বিরুদ্ধেই ধান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার দুপুরে সমবায় দফতরের (বর্ধমান রেঞ্জ ১) দু’জন প্রতিনিধি ওই সমবায়ে গিয়ে তদন্তও করেন। দফতরের দাবি, তাঁদের প্রশ্নের ঠিক মতো জবাবও দিতে পারেননি সমবায়ের ম্যানেজার।

Advertisement

২০১৫-১৬ আর্থিক বর্ষে এই সমিতি ধান কেনায় শীর্ষ স্থান পায় বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, ধান বিক্রেতা হিসেবে কারও জমি নেই, কেউ বা মৃত, এমন ব্যক্তিরও নাম রয়েছে। যদিও ওই সমবায়ের ম্যানেজার দামোদর দাস লিখিত ভাবে দাবি করেছেন, “২০১৫-১৬ সালে জেলা পরিষদ সদস্য সুজয় মালিক ও উপপ্রধান নুরুল ইসলাম খানের তত্ত্বাবধানে ধান কেনা হয়েছে। এখানকার সাধারণ চাষির ধান কেনা হয়নি। যাঁদের কাছে ধান কেনা হয়েছে, তাঁদের জমি নেই। তাঁরা ধান কেনার ব্যাপারে কিছু জানেও না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” যদিও ওই সমবায় সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মণ দাসের অভিযোগ, ‘‘ওই সময়ে সমবায়ের পরিচালন সমিতি ছিল না। তখনই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই দুই নেতা এ সব করেছেন।”

২০১৬-র ১৩ ডিসেম্বর সমবায় দফতরের অডিটর পীযূষকান্তি জটুয়া ওই সমবায় সমিতিকে চিঠি দিয়ে জানতে চান, ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে দু’টি পর্বে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৭ কুইন্ট্যালেরও বেশি ধান কেনা হয়েছে। প্রতি কুইন্ট্যালে কমিশন বাবদ ৩১ টাকা ২৫ পয়সা করে সমিতির পাওয়ার কথা। সেই হিসেবে সমিতির অ্যাকাউন্টে ঢোকার কথা ৩৬ লক্ষ ৭ হাজার ৪৩১ টাকা ২৫ পয়সা। সেখানে ঢুকেছে মাত্র ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৬৭ টাকা। বাকি টাকা কোথায় গেল, সে প্রশ্ন তোলা হয় ওই চিঠিতে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভিটা, রায়পুর, খরিড্যা, শোনপুর ও জামার গ্রামের বাসিন্দারা ওই সমবায় সমিতির উপরেই ধান বিক্রির জন্য নির্ভর করেন। ভিটা গ্রামের শেখ আমজাদ আলি, অমলেন্দু দে, কার্তিক পালদের দাবি, “বৃহস্পতিবারই ব্লক দফতর থেকে ২০১৫-১৬ সালের সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির তালিকা হাতে পেয়েছি। ওই তালিকা দেখে চমকে গিয়েছি। আমাদের মতো অনেকেই ধান বিক্রি করেনি, অথচ তালিকায় তাঁদের নাম রয়েছে।” ওই গ্রামের যুবক জয়ন্ত ঘোষ, শোনপুর গ্রামের রবীন্দ্রনাথ দে, রায়পুর গ্রামের স্বপন ঘোষদের আবার অভিযোগ, ‘‘বেশ কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন, এমন লোকেরও নাম রয়েছে ওই তালিকায়। বিদেশে থাকেন, এমন ব্যক্তিও ধান বিক্রি করেছেন বলে ওই তালিকায় দেখানো হয়েছে।’’ এলাকার তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তারকনাথ দাসেরও অভিযোগ, ‘‘ধান কবে কেনা হল, কেউ দেখতে পেলাম না। আমার নামও তালিকায় রয়েছে।’’

সমবায় দফতরের পরিদর্শক (বর্ধমান ১) পার্থ মজুমদার অবশ্য বলেন, “একগুচ্ছ অভিযোগ এসেছে। তারই প্রথম ধাপে শুক্রবার দফতরের একটি দল তদন্তে গিয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও কথা বলা যাবে না।”

যদিও অভিযুক্ত নেতা তথা রায়ান ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নুরুল হাসান খানের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। অন্যজন অভিযুক্ত নেতা জেলা পরিষদ সদস্য সুজয় মালিকও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ওই সমবায় সমিতিতে দুর্নীতি রয়েছে। তার তদন্ত হোক। তবে ঘটনার দু’বছর পরে এই অভিযোগ করে আসলে আমাকে বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন