রুদ্ধ: বর্ধমান-কালনা রোডে অবরোধ। নবস্থার কাছে। নিজস্ব চিত্র
চাষি ও খেতমজুর দ্বন্দ্বে ফের অশান্ত হয়ে উঠল বর্ধমান ২ ব্লকের নবস্থা। কাজে ইচ্ছুক এক খেতমজুরকে মারধর, জমি থেকে খেতমজুরদের তুলে দেওয়া ও সিপিএমের বিরুদ্ধে বহিরাগত খেতমজুরদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নবস্থা পঞ্চায়েত দফতরের সামনে বর্ধমান-কালনা রোড অবরোধ করেন চাষিরা। পুলিশ গিয়ে বিষয়টি আলোচনার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে বর্ধমান ২ ব্লকের নবস্থা, বেগুট, আউশা ও বোধপুরে প্রায় ৫ হাজার বিঘা জমিতে চাষ বন্ধ। সিপিএমের খেতমজুর সংগঠনের দাবি, সরকার নির্ধারিত মজুরি কিংবা প্রথা মেনে আলোচনার মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে। যা মানতে নারাজ এলাকার কৃষকেরা। এই নিয়েই চলছে গোলমাল। বিকেলে বৈঠকে অবশ্য দুটি গ্রাম প্রথা মেনে চাষের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। বেগুট গ্রামের চাষিরা জানিয়ে দেন, তাঁরা বাইরে থেকে মজুর এনে কাজ করাবেন। নবস্থার কোনও প্রতিনিধি অবশ্য ছিলেন না।
বুধবারও চাষ শুরুর জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে আট ঘন্টা ওই রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলে নবস্থা, বেগুট, আউশা ও বোধিপুর গ্রামের কয়েকশো চাষি। বিকেলে বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিক চাষিদের কাছে গিয়ে পুরনো প্রথা মেনেই চাষের কাজ শুরু করার কথা জানান। তিনি আশ্বাস দেন, পরে আলোচনার মাধ্যমে খেতমজুরদের দাবি মীমাংসা করা হবে। আশ্বাস পেয়ে চাষিরা অবরোধ তুলে নেন। স্থানীয় পঞ্চায়েতও গ্রামে গ্রামে পুরনো প্রথা মেনে বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু হবে বলে প্রচার করে। কিন্তু মাঠে নামতেই ছবি বদলে যায়।
চাষিদের অভিযোগ, এ দিন সকালে কাজ শুরু হওয়ার পরেই সিপিএমের কিছু দুষ্কৃতী এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে দেয়। খেতমজুরদের নাম করে ওই দুষ্কৃতীরা চাষিদের ভয় দেখায়। এক প্রবীণ চাষির খেতজমি ঘিরে চিৎকার-চেঁচামেচিও শুরু হয়। চাষিদের অন্যতম প্রতিনিধি সুশান্ত সাঁইয়ের দাবি, “বহিরাগত খেতমজুরদের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁরা বীজ ধান ফেলেই খেতজমি থেকে উঠে পড়েন। আউশা গ্রামে চাষে ইচ্ছুক এক খেতমজুরকে মারধর করে দুষ্কৃতীরা। তার জন্যই স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ হয়েছে।” নবস্থা গ্রামের চাষি সুজিত পাঁজা বলেন, “বোরোয় ক্ষতি হয়েছে। গয়না বন্ধক রেখে আলু চাষ করেছি। তাতেও দাম পাইনি। এখন যদি সময়ে চাষ করতে না পারি তাহলে দাঁড়াব কী ভাবে?” বেশ কয়েকজন চাষির খেদ, “আমরা সোজা হয়ে দাঁড়ালে তবেই না দাবি মানতে পারব। আমাদের অবস্থাটা কী বুঝবে না কেউ।”
কিন্তু খেতমজুরদেরও তো আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে? চাষিরা অবশ্য তা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, “গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে কাজে চলে যাচ্ছে খেতমজুরদের একটা অংশ।” প্রায় ১৫ দিন ধরে সিপিএমের নেতৃত্বে খেতমজুররা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করছে। তাতে ওই চারটি গ্রামে কয়েক হাজার বিঘা জমি পতিত হয়ে পড়ে রয়েছে। সেখানে গরু-ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে।
খেতমজুরদের নেতা সিপিএমের কল্যাণ হাজরা বলেন, “সব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। খেতমজুররা চাইছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্য দেওয়া হোক কিংবা প্রথা মেনে আলোচনার ভিত্তিতে মজুরি বাড়ানো হোক।” চাষিদের আর এক প্রতিনিধি পতিতপাবন সাঁই বলেন, “গায়ের জোরে মজুরি বৃদ্ধির দাবি মানা যাবে না। সরকারি কর্তারা মজুরি ঠিক করে দিলে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু খেতমজুরদের সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে হবে।”