প্রতীকী ছবি।
ইটভাটার যে সব শ্রমিক বাড়ি ফিরতে চাইবেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে। বাসের ব্যবস্থা করবেন ভাটা মালিকেরা। সব দেখে অনুমতি দেবে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার ভাটা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে এমনটাই জানিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। আজ, বুধবার থেকে কয়েকটি সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানানো হয়েছে।
তবে পশ্চিম বর্ধমান জেলা ইটভাটা মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মহসিন খান বলেন, ‘‘জেলায় তিনশোরও বেশি ভাটা রয়েছে। ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের তালিকা জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। অন্তত ৪০টির বেশি ভাটা থেকে বাসে করে শ্রমিকদের পাঠানোর কাজ হয়েছে।’’
সম্প্রতি জামুড়িয়ার ভাটা শ্রমিকদের একাংশ হেঁটে বাঁকুড়ায় বাড়ি ফিরছিলেন। মেজিয়া সেতুর কাছে তাঁদের আটকানো হয়। এর পরে মঙ্গলবার সকালেও কুলটির ডিসেরগড়ে সুভাষ সেতুর মুখে শতাধিক ভাটা শ্রমিককে আটকায় পুলিশ। বারাবনি, দোমোহনি, ভানোড়া-সহ নানা এলাকার ভাটার ওই কর্মীরা পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘কাজ না থাকায় সামান্য কিছু টাকা দিয়ে মঙ্গলবার ভোরে ভাটা থেকে বার করে দিয়েছেন মালিকেরা। খাবার খরচও দেওয়া হচ্ছিল না। বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা হয়নি।’’ ওই শ্রমিকেরা তাই হেঁটেই ফিরছিলেন। তাঁদের মধ্যে থাকা ফুলমতি দেবী নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা শ্রমিক বলেন, ‘‘হাঁটতে পারছি না। কিন্তু ভাটায় থাকার পরিস্থিতি নেই।’’ কোলের শিশুকে কাঁধে নিয়ে সমানে কাঁদছিলেন মিনতি দেবী। তাঁর আর্জি, ‘‘একটা কিছু ব্যবস্থা করুন।’’ পুলিশ ও স্থানীয়েরা শ্রমিকদের জন্য খাবার ও শিশুদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করেছেন বলে জানান নারদ মাজি নামে এক শ্রমিক। কমিশনারেট জানায়, ওই শ্রমিকদের কাছে পুরুলিয়ায় ঢোকার বৈধ অনুমতিপত্র নেই। তাই আটকানো হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভেন্দু বিশ্বাস জানান, জেলার প্রত্যেক ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরতে চাইলে, ভাটা মালিকদের বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের নামের তালিকা তৈরি করে ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে। সেই তালিকা ধরে প্রশাসন অনুমতি দেবে। পরে পুলিশের সাহায্যে শ্রমিকদের বাসগুলিকে সীমানা পার করানো হবে।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘পুলিশ তালিকা দেখে অনুমতি দেবে। কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ অনমিত্রবাবু জানান, মঙ্গলবার ওই শ্রমিকেরা কোন ভাটা থেকে এসেছিলেন, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, শ্রমিকেরা যে জেলায় ফিরবেন সেই জেলার আধিকারিকদের সঙ্গে আগাম কথা বলা দরকার। তাই, ধাপে-ধাপে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানো হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক শুভেন্দুবাবু জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা বারাবনি ও জামুড়িয়ায় থাকায় ওই দুই ব্লকের উপরে বাড়তি নজর রয়েছে। বিডিও (বারাবনি) বিডিও সুরজিৎ ঘোষ জানান, ভাটা মালিকদের ডেকে প্রশাসনের নির্দেশের কথা জানানো হয়েছে।