২ নম্বর জাতীয় সড়কে আলু বিক্রি নিয়ে বামেদের অবরোধ। ছবি: উদিত সিংহ।
বিপর্যয় হয়েছে আলু চাষে। তার জেরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল বামেরা।
রবিবার সকালে বর্ধমানের শক্তিগড়ের কাছে ঘণ্টা দেড়েক ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখায় রীতিমতো যানজট হয়। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে কয়েকশো বাস, লরি ও গাড়ি। নাকাল হলেন কয়েক হাজার যাত্রী। এ দিনই আবার সিঙ্গুরের রতনপুরে মন্ত্রী বেচারাম মান্নার বাড়ির সামনে আলু পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান কৃষকসভার সদস্যেরা। মন্ত্রী যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কলকাতা থেকে দুর্গাপুর, আসানসোল হয়ে দিল্লিগামী ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে প্রতি দিন প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করে। চার লেনের এই রাস্তা পানাগড়ে এখনও দু’লেনের রয়ে যাওয়ায় সেখানে নিত্য যানজট হয়। এ দিন সকাল ৯টা থেকে শক্তিগড়ের আমড়া মোড়ের কাছে সিপিএম-সহ বামপন্থী দলগুলির কর্মী-সমর্থকেরা জড়ো হন। পৌঁছন বর্ধমানের সিপিএম নেতা অমল হালদার-সহ দলের অনেকে। ১০টা নাগাদ জাতীয় সড়কের দু’দিক আটকে অবরোধ শুরু হয়। পুলিশকে অমলবাবুরা জানান, আলু সংরক্ষণ ও আত্মঘাতী চাষিদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে প্রশাসনিক আশ্বাস না মেলা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলবে।
অবরোধের জেরে বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে লাইন দিয়ে সব গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। বাস থেকে নেমে অনেক যাত্রীকে ট্রেন ধরার জন্য শক্তিগড় স্টেশনের দিকে হাঁটা দিতে দেখা যায়। রায়নার ব্যবসায়ী শেখ মতিন বলেন, “২টোর মধ্যে কলকাতায় পৌঁছে মালপত্র নিতে হবে। কিন্তু তা পারব বলে মনে হচ্ছে না। দিনটা বৃথা গেল!” বর্ধমানের চৌধুরীবাজারের শেফালি কর্মকার অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে বেলেঘাটা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “এত ক্ষণ আটকে থেকে নিজেকেই অসুস্থ লাগছে।”
শেষে মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) অরুণ রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে চাষিমৃত্যুর ঘটনার তদন্ত-সহ নানা দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। তার পরেও আটকে থাকা গাড়ি পার করে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে বেশ কিছু ক্ষণ সময় লেগেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
অমলবাবুর অভিযোগ, “বর্ধমান জেলায় এখন প্রতি দিনই চাষিমৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া তো দূর, তাঁদের চাষি বলেই মানছে না।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক দাবি করেন, “প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে তৃণমূলের লোকেরা হিমঘরে আলু রাখা নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।” কৃষকসভার নেতা আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের আবার অভিযোগ, “চাষিরা আলু বিক্রি করতে পারছেন না। সরকার আলু কেনার নাটক করছে।”
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “চাষিমৃত্যু নিয়ে প্রশাসন তদন্ত করে যা বোঝার বুঝেছে। জাতীয় সড়ক অবরোধ করে মানুষকে নাকাল করা দুর্ভাগ্যজনক।” যদিও বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা সিপিএম নেতা অমলবাবুর বক্তব্য, “যাত্রীদের অসুবিধার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আলুচাষিদের দিকটা বিবেচনা করলে তাঁরা বুঝবেন, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।” জনা কয়েক যাত্রী অবশ্য বলেন, “আলুচাষিদের অবস্থা জানি। কিন্তু সে ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে না গিয়ে আমাদের হয়রান করা তো অর্থহীন।”