জেলা ভাগ হতে বাকি আর দিন পাঁচেক। সে নিয়ে উৎসাহ যথেষ্ট শিল্পাঞ্চলবাসীর মধ্যে। প্রস্তুতি চরমে প্রশাসনের অন্দরে। এই আবহেও সংগঠন ভাগের প্রশ্নে সিপিএমের বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব কিছু বলতে নারাজ। জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, “এখনও এ নিয়ে কোনও আলোচনা দলে শুরু হয়নি।” যদিও রাজ্য নেতৃত্ব সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা ভাগের সরকারি ঘোষণার পরেই সংগঠন ভাগ করে দেওয়া হবে।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল-দুর্গাপুর নিয়ে তৈরি হতে চলা পশ্চিম বর্ধমান জেলায় দলের সংগঠনে ইতিমধ্যে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। দলের অন্দরে নতুন জেলার সম্পাদক হিসেবে বংশগোপাল চৌধুরী, গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় ও আভাস রায়চোধুরী— এই তিন জনের নাম আলোচনায় রয়েছে। দলের এক জেলা নেতা জানান, এই তিন জনই রাজ্য কমিটির সদস্য। আভাস রাজ্যে ডিওয়াইএফের সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। বংশগোপালবাবু ও গৌরাঙ্গবাবুও দীর্ঘ দিনের নেতা। রাজ্য নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাজ্য সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, জেলা ভাগ হওয়ার পরে তাড়াতাড়িই সংগঠন ভাগ করা হবে। এখন বর্ধমান জেলা সিপিএম নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের অনেকে নানা বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য নেতৃত্বের মতের বিরুদ্ধে গিয়েছেন। সেই নেতাদের বেশির ভাগই জেলার গ্রামীণ এলাকার প্রতিনিধি। সে তুলনায় রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলের নেতাদের মতের মিল বেশি। তাই রাজ্য নেতৃত্ব শিল্পাঞ্চলে জেলা সংগঠন তৈরি করতে বেশি দেরি করবেন না বলেই অনেক সিপিএম নেতার অনুমান। যদিও বংশগোপালবাবু বলেন, ‘‘যে যাই বলুক, এখনও নতুন জেলা কমিটি গঠন নিয়ে আমাদের কোনও আলোচনা হয়নি। তবে ঠিক সময়েই সব হয়ে যাবে।’’
এরই মধ্যে জেলা ভাগের কৃতিত্ব নিয়ে সিপিএম-তৃণমূলে তরজা তৈরি হয়েছে। বংশগোপালবাবুর দাবি, অশোক মিত্র কমিশনের জেলা ভাগের সুপারিশ মেনে বাম আমলেই নতুন জেলার জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমাদের সময় এডিডিএ এই অঞ্চলে যে উন্নয়ন করেছে, বর্তমান সরকার সেই পরিকাঠামো কাজে লাগাচ্ছে।’’
যদিও এই দাবি উড়িয়ে আসানসোলের তৃণমূল নেতা তথা শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘সিপিএমের দলীয় তহবিলের বড় অংশ আদায় হতো এই এলাকা থেকে। তার জোরেই রাজ্য নেতৃত্বের কাছে সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির গুরুত্ব ছিল। জেলা ভাগ করলে তহবিল জোগানে সমস্যা হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই ওরা বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা করেছে। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগেই জেলা ভাগের কথা বলেছিলেন।” বংশগোপালবাবুর প্রতিক্রিয়া, “এ সব মিথ্যে গল্প ওরা আগেও প্রচার করেছিল, এখনও করছে।”