Coronavirus Lockdown

জলের তলায় খেত, আশঙ্কা বড়সড় ক্ষতির

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১,৬৪,২০৫ হেক্টর জমিতে এ বার বোরো ধানের চাষ হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০২:৪০
Share:

ভাতারে জল জমেছে বোরো ধানের জমিতে, ঘুরে দেখছেন চাষি। —নিজস্ব চিত্র

ঘুর্ণিঝড় আমপানে ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি। জমিতে থাকা বোরো ধান ও তিল চাষে বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। টানা বৃষ্টিতে খেত জলে ডুবে গিয়েছে। কেটে রাখা ধান জলের তলায় চলে যাওয়ায়, চাষিদের মাথায় হাত। রোদ উঠলে আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর।

Advertisement

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১,৬৪,২০৫ হেক্টর জমিতে এ বার বোরো ধানের চাষ হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্ত ৭৬.৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছিল। জমিতে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির জলে ডুবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলায় প্রায় ৪৬,৭০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়নি। আমপানের পরে প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমির ধানে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিল চাষের ১২,৩৪০ হেক্টর জমি জলের তলায় রয়েছে বলে কৃষি দফতরের রিপোর্ট। প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আনাজ নষ্ট হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘বোরো ও তিল মিলিয়েই জেলায় ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলা কৃষি দফতর প্রাথমিক রিপোর্টে জানিয়েছে।’’

Advertisement

উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৩ হাজার হেক্টরের আনাজ চাষে ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে আম, কলা, পেঁপে, শশা-সহ একাধিক ফলের বাগান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘‘ফল ও আনাজ মিলিয়ে প্রাথমিক ভাবে ৪৯ কোটি টাকা খরচ ধরা হচ্ছে। সমস্ত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে।’’ পূর্বস্থলী, গলসি, কালনার বিভিন্ন জায়গায় মাচা ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। পূর্বস্থলীতে ৫০০ বিঘার বেশি বাগানের আম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জেলা কৃষি দফতরের উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, রোদ উঠলে আরও বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, ভাতার, গলসি ১ ও ২ ব্লক, মন্তেশ্বরের মতো কয়েকটি ব্লকে ৩৩-৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছিল। ঘুর্ণিঝড়ের ফলে ওই সব ব্লকে ক্ষতির সম্ভাবনাও বেশি। ভাতারের চাষি অমর প্রামাণিক, গলসির শেখ সিরাজুলদের কথায়, “ধান কাটার মরসুম থেকে ঝড়-জলের দুর্যোগ শুরু হয়েছে। বুধবার যে ভাবে ঝড় হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে বৃষ্টি। ধান আর বাড়ি নিয়ে যেতে পারব বলে মনে হচ্ছে না!’’ বর্ধমান ২ ব্লকের কুমিরকোলার মোমেনা বেগম বলেন, ‘‘মাঠে নেমে চাষাবাদ করি। ঝড়ে সমস্ত ধান খেতে পড়ে রয়েছে। জল হওয়ায় ডুবে গিয়েছে। বিরাট ক্ষতির মুখে পড়লাম।’’ কাটোয়ার সিন্টু মাঝি, কালনার নিরঞ্জন ভট্টাচার্যদের কথায়, ‘‘এই ক্ষতি চাষিদের পক্ষে সামলানো কষ্টকর।’’

বারবার জানানো সত্ত্বেও সব ধান কেটে ঘরে তোলা গেল না কেন? চাষিদের দাবি, ধান কাটা শুরুর সময় থেকে লাগাতার বৃষ্টির জন্য সমস্যা শুরু হয়। খেত জমি ভিজে থাকায়, যন্ত্র (কম্বাইন্ড হারভেস্টর) মাঠে নামানো যায়নি। তার উপরে ‘লকডাউন’ থাকায় শ্রমিক নিয়ে সমস্যা ছিল। এ ছাড়াও বেশ কিছু জমিতে বরাবর মরসুমের শেষ দিকে চাষ হয়। সে জন্যই সব জমির ধান কেটে ঘরে তোলা যায়নি। এই ক্ষতি সামলানো হবে কী করে? জগন্নাথবাবুর বক্তব্য, ‘‘বিমা সংস্থায় চাষের জমির ছবি-সহ সব রকম তথ্য দিয়ে ‘আপলোড’ করতে বলা হয়েছে চাষিদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন