আসানসোলে সকাল ন’টায় ডাকাতি

‘চাবি দো’ বলেই মার, লুঠ অফিস

সংস্থার শাখা আধিকারিক পাপড়ি বসুনায়েক জানিয়েছেন, দুই সহকর্মী ও এক জন রক্ষীকে নিয়ে সবে তিনি অফিসে ঢুকেছিলেন। অফিসের সাটার ও কোল্যাপ্সিবল গেট খুলে বায়োমেট্রিক-হাজিরার দিতে আঙুলের ছাপ দিচ্ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৪২
Share:

ঘটনাস্থল: তদন্তে পুলিশ। শনিবার আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র

সকাল আটটা ৫৫, শনিবার। সবে কয়েক জন অফিসে ঢুকেছেন। আচমকা হাজির চার জন। হাতে রিভলভার। মুখ ঢাকা হেলমেট ও মাঙ্কিটুপিতে। মুহূর্তে হুকুম, ‘চাবি দো’। — তার পরে ৪০ মিনিট জুড়ে চলল ‘অপারেশন’। লুঠ হল একটি বেসরকারি স্বর্ণঋণ সংস্থার আসানসোলের কোর্ট মোড় লাগোয়া বার্নপুর রোডের অফিস।

Advertisement

পুলিশ জানায়, সংস্থার শাখা আধিকারিক পাপড়ি বসুনায়েক জানিয়েছেন, দুই সহকর্মী ও এক জন রক্ষীকে নিয়ে সবে তিনি অফিসে ঢুকেছিলেন। অফিসের সাটার ও কোল্যাপ্সিবল গেট খুলে বায়োমেট্রিক-হাজিরার দিতে আঙুলের ছাপ দিচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়েই আগ্নেয়াস্ত্র হাতে চার জন দুষ্কৃতী হুড়মুড় করে অফিসে ঢোকে। গেটে পাহারায় থাকে আরও তিন জন। ওই শাখার কর্মীরা জানান, প্রথমেই দুষ্কৃতীরা ভল্টের চাবি চায়। পাপড়িদেবীর অভিযোগ, ‘‘চাবি দিতে না চাইলে ওরা আমাদের মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করে। পরে আমাদের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে ভল্ট খুলে লুঠপাট চালায়।’’

খানিক বাদে তদন্তে আসে পুলিশ। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনাও। তাঁর দাবি, ওই অফিসে থাকা সিসি ক্যামেরা ও অ্যালার্ম খারাপ ছিল। পুলিশকর্মীদের দাবি, বারবার বলা হলেও সেগুলি সারাতে ব্যবস্থা নেননি ওই সংস্থার কর্তারা। তবে লাগোয়া কয়েকটি সংস্থার অফিস থেকে সিসিটিভি ফুটেজ মিলেছে বলে জানান তদন্তকারীরা।

Advertisement

সেখানে কী দেখা গিয়েছে? অফিসের বাইরে কয়েক জন ঘোরাঘুরি করছেন পাইচারি করার ভঙ্গিতে। খানিক বাদে মাথায় হেলমেট পরা এক জন বের হয়ে নিশ্চিন্তে অদূরের স্ট্যান্ডে রাখা মোটরবাইকে উঠছে। খানিক বাদে হলুদ রঙের একটি ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এল আরও এক জন। সে উঠল ওই মোটরবাইকের পিছনে। পরে আরও এক জন, দৃশ্যতই ভারী ব্যাগ নিয়ে কোনও রকমে বেরিয়ে তা রাখল অন্য একটি মোটরবাইকের পিছনে। ইতিমধ্যে প্রথম ব্যক্তির মোটরবাইকটি ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে গিয়েছে। পরে আরও এক জন ব্যাগ হাতে বের হল। শেষে হেলমেট মাথায় খালি হাতে বের হল আরও এক জন। তদন্তকারীদের দাবি, ওই সাত জন মোট চারটি মোটরবাইকে করে এসেছিল। দু’টি মোটরবাইককে বার্নপুরের দিকে, অন্য দু’টি জিটি রোডের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে।

এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের অন্দরমহলে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। প্রথমত, পুলিশের অন্দরমহলের একাংশ বিস্মিত। কারণ, শহরের অন্যতম জনবহুল এলাকায় প্রায় ৪০ মিনিট ধরে এমনটা ঘটল কী ভাবে। যদিও ওই শাখার আধিকারিকদের দাবি, তাঁদের হাজিরার সময় সকাল ন’টা। সেই সময়ে বাইরে খুব একটা লোক জন ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, এই অফিসে এক জন বন্দুকধারী রক্ষী রয়েছেন। তিনি অফিস খোলার আগে রোজ সকাল পৌনে ন’টায় অফিসে আসেন। কিন্তু শনিবার ঘটনার দিন তিনি ন’টার বেশ কিছু পরে অফিসে আসেন। কেন এমনটা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। তৃতীয়ত, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের একাধিক কর্তার অভিজ্ঞতা, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের ঋণদানকারী সংস্থাগুলির অফিসের যাবতীয় সম্পত্তির বিমা করানো থাকে। সে ক্ষেত্রে বিমার টাকা পাওয়ার জন্য অনেক সময়েই ‘ভুয়ো ডাকাতি’র ছক কষা হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তবে শনিবার রাত পর্যন্ত কত টাকা মূল্যের সোনা বা নগদ খোওয়া গিয়েছে, সে হিসেব হয়নি বলে জানান পুলিশ কমিশনার। সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, ‘‘দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে। শহরের সব রাস্তা ও সীমান্ত এলাকায় পুলিশি নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’’ সংস্থাটির তরফে জেনারেল ম্যানেজার আরএম দিওয়ান জানান, এই ঘটনার পরে শাখাটি সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, গ্রাহক-স্বার্থ কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন