বাবার দেহ মর্গে, পরীক্ষায় মেয়ে

মেয়ে সালমা খাতুন অবশ্য বাবার স্বপ্ন পূরণে অটল। বুধবার বাবার দেহ হাসপাতাল থেকে আসার আগেই পরীক্ষা দিতে যায় সে। মাথা ঠান্ডা রেখে ভাল ভাবে পরীক্ষা দেয় গলসি সারদা বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গলসি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০৬
Share:

শোক: আইনাল শেখের দেহ বাড়িতে আসার পরে ভেঙে পড়েছে সালমা (সামনের সারিতে মাঝে) ও পরিজনেরা। ছবি: কাজল মির্জা

ছেলে নবম শ্রেণিতেই পড়া ছেড়ে দিয়েছে। একমাত্র মেয়েকে নিয়েই তাই ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতেন বাবা। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাটাই মেয়ের পাশে থেকে সাহস জোগাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষার দিনই রাতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল গলসির দয়ালপুরের আইনাল শেখের (৪৯)।

Advertisement

মেয়ে সালমা খাতুন অবশ্য বাবার স্বপ্ন পূরণে অটল। বুধবার বাবার দেহ হাসপাতাল থেকে আসার আগেই পরীক্ষা দিতে যায় সে। মাথা ঠান্ডা রেখে ভাল ভাবে পরীক্ষা দেয় গলসি সারদা বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রী। তবে বাড়ি ফিরে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। মৃত বাবার বুকে আছড়ে সালমা বলে, ‘‘তোমার চলে যাওয়ার দিনও পরীক্ষা দিয়েছি। তোমার স্বপ্ন পূরণ করবই।’’

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে শীগ্রাম থেকে আরও দু’জনের সঙ্গে কাজ সেরে মোটরবাইকে ফিরছিলেন কলের মিস্ত্রি আইনাল। চালক বদাই শেখ ছাড়া আর কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। গলিগ্রামের কাছে একটি গাড়ি তাঁদের ধাক্কা মারে। তিন জনকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় আইনালের। বদাইকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আর এক জন লকাই শেখের চিকিৎসা চলছে।

Advertisement

এ দিন পরীক্ষা শুরুর আগে গলসি সারদা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা চিত্রলেখা তা ওই পরিবারের সঙ্গে যোগযোগ করেন। সালমা যাতে পরীক্ষা দিতে যায়, তার জন্যে প্রাথমিক কথাবার্তাও বলেন তিনি। স্কুলের পোশাক পড়ে একটি মোটরবাইকে করে পরীক্ষা দিতে যায় সালমা। আগের দিন সঙ্গে গিয়েছিলেন বাবা। এ দিন সঙ্গে ছিলেন মাসি-দাদারা। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ঠাঁই বসেছিলেন স্কুলে। পরীক্ষা শেষে মেয়ে বলে, “বাবা চাইতেন, আমি ভাল করে পড়াশুনো করি। সে জন্যেই সমস্ত মনের জোর এক করে পরীক্ষায় বসেছিলাম। অনেক প্রশ্ন চেনা ছিল। সব উত্তরই দিয়েছি। আশা করি, কোনও অসুবিধা হবে না।’’

দু’কামরার মাটির ঘর, অ্যাসবেস্টস চালের ছাউনির নীচে হাজির পরিজন-পড়শিরা। তাঁরা জানান, কোনও রকমে সংসার চালাতেন আইনাল। বড় ছেলেকে ঠিকমত পড়াতে পারেননি অভাবে। সালমার মা জমিলা বেগমের কথায়, “ছেলেকে পড়াতে না পারার দুঃখ ছিল। তাই উনি চাইতেন মেয়ে যেন মন দিয়ে পড়ে। বাবার ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে সালমা যখন বলল, পরীক্ষা দিতে যাব, তখন আর আটকাইনি।’’ সালমার কাকা জয়নাল বলেন, “সালমা তো আমাদের পরিবারের গর্ব।’’

সহপাঠী আসমিনা খাতুন ও রিয়া খাতুন, প্রধান শিক্ষিকা চিত্রলেখাদেবী বলেন, ‘‘ও বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। তবুও ওর মনের জোর ও ইচ্ছাকে কুর্ণিশ না জানিয়ে পারছি না। আমরা সব সময়ই সালমার পাশে রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন