১৮ ঘণ্টা প্ল্যাটফর্মে পড়ে দেহ, প্রশ্নের মুখে রেল

যে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন থেকে ওঠা-নামা করছেন যাত্রীরা, তারই অন্য প্রান্তে টানা ১৮ ঘণ্টা পড়ে রয়েছে চাদরে মোড়া দেহ। — রবিবার ভোরে এমনই দৃশ্যই দেখা গেল আসানসোল স্টেশনে। ঘটনার খবর চাউর হতেই, যাত্রীদের একাংশ অস্বস্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

পড়ে রয়েছে দেহ। নিজস্ব চিত্র

যে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন থেকে ওঠা-নামা করছেন যাত্রীরা, তারই অন্য প্রান্তে টানা ১৮ ঘণ্টা পড়ে রয়েছে চাদরে মোড়া দেহ। — রবিবার ভোরে এমনই দৃশ্যই দেখা গেল আসানসোল স্টেশনে। ঘটনার খবর চাউর হতেই, যাত্রীদের একাংশ অস্বস্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রথমে ডোমদের মজুরি বাড়ানোর দাবি ও পরে মৃতের ছেলের অনুরোধ, এই জোড়া কারণেই দেহটি দীর্ঘক্ষণ প্ল্যাটফর্মে রাখতে হয়।

Advertisement

রেল সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে মিথিলা এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতা থেকে বিহারের বেগুসরাই যাচ্ছিলেন মহম্মদ কারমাত (৫৫) নামে ওই প্রৌঢ়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বছর আঠারোর ছেলে মহম্মদ ফিরোজ। আসানসোল জিআরপি ও রেলের আধিকারিকদের কাছে ফিরোজ জানান, কলকাতা থেকে ট্রেনে চাপার সময়ে তাঁর বাবা সুস্থই ছিলেন। কিন্তু মাঝ রাস্তায় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। ফিরোজ সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই ট্রেনের কর্তব্যরত টিকিট পরীক্ষকদের সঙ্গে। খবর যায় আসানসোল স্টেশনেও।

আসানসোল ডিভিশনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রূপায়ণ মিত্র জানান, ওই ব্যক্তির অসুস্থতার খবর মেলা মাত্রই রেলের চিকিৎসক দল আসানসোল স্টেশনে চলে আসেন। রাত আটটা নাগাদ মিথিলা এক্সপ্রেস স্টেশনে পৌঁছতেই চিকিৎসকেরা ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে তাঁকে মৃত বলে জানান। দেহটি ট্রেন থেকে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে নামানো হয়।

Advertisement

রেল সূত্রের খবর, এর পরেই শুরু হয় বিভ্রাট। দেহটি রেলের মর্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডোমদের খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ডোমরা ঘটনাস্থলে এসেও দেহ সরাতে অস্বীকার করেন। ডোমদের অভিযোগ, আগে দেহ বহনের জন্য দেহ পিছু এক হাজার টাকা দেওয়া হতো। এখন তা কমিয়ে সাতশো টাকা করা হয়েছে। হাজার টাকা না দিলে তাঁরা দেহ সরাবেন না বলে জানান। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু দূরপাল্লার ট্রেন আসে ওই প্ল্যাটফর্মে। যাত্রীরা ওঠানামার পথে দেহটিও নজরে পড়ে।

শেষমেশ রাত প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ ডোমেদের হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দেহটি সাত নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ দিকে থাকা রেলের মর্গের সামনে নিয়ে আসা হয়। রূপায়ণবাবুর দাবি, এর পরেই মৃতের ছেলে অনুরোধ করেন, কলকাতা ও বেগুসরাই থেকে আত্মীয়রা না আসা পর্যন্ত যেন দেহটির ময়না-তদন্ত না হয় এবং মর্গে ঢোকানো না হয়। রাতভর দেহের পাশে ছিলেন রেলের কর্মীরা এবং মৃতের ছেলে। রবিবার দুপুর দু’টো নাগাদ মৃতের পরিজনেরা স্টেশনে পৌঁছনোর পরে তা আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

কিন্তু ইতিমধ্যে ওই সাত নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকেও রবিবার ভোরে বেশ কয়েকটি ট্রেন ছাড়ে। যাত্রীদের চোখের সামনেই পড়েছিল সাদা কাপড়ে মোড়া দেহটি। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে দিনভর আর বেশি ট্রেন চলাচল করে না।

যাত্রীদের একাংশের ক্ষোভ, একটি দেহ কোন যুক্তিতে অতক্ষণ প্ল্যাটফর্মে ফেলে রাখলেন রেল কর্তৃপক্ষ। রূপায়ণবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা শুধু ছেলের অনুরোধ রেখেছি মাত্র।’’ তবে যাত্রীদের প্রশ্ন, এ রকম অনুরোধের ভিত্তিতে আদৌ দেহ প্রকাশ্যে ফেলে রাখা যায় কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন