বাড়ির পাশে জমা হচ্ছে জঞ্জাল। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহে বাইরের লোক নিয়োগ ও সে জন্য বাসিন্দাদের কাছে টাকা চাওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে আসানসোলের ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, যা পুরসভার করার কথা সেই কাজের জন্য তাঁরা খরচ করবেন কেন? যদিও পুর কর্তৃপক্ষ নন, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই ব্যবস্থা চালু করেছেন বলে জানান এলাকার কাউন্সিলর ববিতা দাস। গোটা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলের কাউন্সিলররা।
ওই ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দার অভিযোগ, তিন দিন ধরে বেশ কয়েক জন বহিরাগত বাড়িতে এসে দাবি করছেন, এ বার থেকে পুরসভার সাফাইকর্মীরা আর আবর্জনা পরিষ্কার করবেন না। এই কাজে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এর জন্য বাসিন্দাদের প্রতি মাসে ন্যূনতম চল্লিশ টাকা করে দিতে হবে। এই দাবিতে বিভ্রান্ত এলাকাবাসীর অনেকে পাল্টা জানতে চান, কার নির্দেশে এমন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। উত্তরে বহিরাগতেরা জানান, কাউন্সিলরই তাঁদের কাজে লাগিয়েছেন। তা শুনে বাসিন্দারা বিভ্রান্ত হন। তাঁদের যুক্তি, এই রকম একটি সিদ্ধান্তের কথা পুরসভা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়নি। কাউন্সিলরও ওয়ার্ড কমিটির বৈঠক ডেকে বাসিন্দাদের মত নেননি। তাই ওই বহিরাগতরা আদৌ ঠিক বলছেন কি না, সংশয়ে পড়়েন তাঁরা।
কাউন্সিলর ববিতা দাস অবশ্য ওই বহিরাগতদের নিয়োগের কথা মেনে নিয়ে বলেন, ‘‘পুরসভায় সাফাইকর্মীর অভাব আছে। তাই বাড়ি-বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ করতে পাঁচ জন বহিরাগতকে নিয়োগ করা হয়েছে। তার খরচ জোগাতে প্রত্যেক বাড়ি থেকে চল্লিশ টাকা করে নেওয়া হবে।’’ তবে এ ব্যাপারে পুরসভার কোনও অনুমোদন নেননি বলে জানান তিনি। পুরসভা এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান সাফাই দফতরের মেয়র পারিষদ লক্ষণ ঠাকুরও। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি জানান, ব্যক্তিগত ভাবে তিনি কাউন্সিলরদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাঁরা চাইলে এলাকায় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহের কাজে লাগাতে পারেন। সে জন্য পুরসভা থেকে পর্যাপ্ত কোদাল, বেলচা, ঝুড়ি ও গাড়ি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘তবে আমরা এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’’
কাউন্সিলরের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন সিপিএম কাউন্সিলর তথা জামুড়িয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান তাপস কবি। তিনি বলেন, ‘‘শহরবাসী পুরসভাকে রাজস্ব দেন। তা থেকেই এলাকার সাফাইকাজ করা উচিত। কলকাতাতেও বাড়ি-বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহ হয়। সে জন্য শহরবাসীকে বাড়তি টাকা দিতে হয় না।’’ তাঁর আরও দাবি, এই উদ্যোগের ফলে সাফাইকর্মীরা সঙ্কটে পড়বেন। ভবিষ্যতে পুর কর্তৃপক্ষ আর কোনও স্থায়ী বা অস্থায়ী সাফাইকর্মী নিয়োগ করবেন না বলে তাঁর আশঙ্কা। এর পিছনে কাউন্সিলরের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও অভিযোগ তাপসবাবুর। পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর ভৃগু ঠাকুরের প্রশ্ন, ‘‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান প্রকল্পে শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। এর পরেও শহরবাসীর কাছে সাফাইয়ের জন্য টাকা চাওয়া হচ্ছে কেন?’’