অ্যাকাউন্ট নেই, হাতে নগদ না পেয়ে বিপাকে বিড়ি শ্রমিকেরা

দিন রাত এক করে ওঁরা তামাক, কেন্দু পাতা আর সুতো দিয়ে বিড়ি বাঁধেন। দিন গেলে হাতে যা আসে, তা দিয়েই হাঁড়ি চড়ে হেঁসেলে। স্কুলে যাওয়ার খরচ পায় ছেলেমেয়েরা। কিন্তু ওঁদের প্রায় কারওই ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে অ্যাকাউন্টই নেই।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩৭
Share:

একসঙ্গে বসে বিড়ি বাঁধা। মঙ্গলকোটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দিন রাত এক করে ওঁরা তামাক, কেন্দু পাতা আর সুতো দিয়ে বিড়ি বাঁধেন। দিন গেলে হাতে যা আসে, তা দিয়েই হাঁড়ি চড়ে হেঁসেলে। স্কুলে যাওয়ার খরচ পায় ছেলেমেয়েরা। কিন্তু ওঁদের প্রায় কারওই ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে অ্যাকাউন্টই নেই। তার উপরে আর নোট বাতিলের পরে মঙ্গলকোটের কারিগরপা়ড়া আর টালিপাড়ার প্রায় নশো বাসিন্দার সমস্যা আরও বেড়েছে, কয়েক দিন ধরে মজুরি না মেলায়।

Advertisement

এই এলাকায় বিড়ি শ্রমিকদের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, এই পেশার সঙ্গে বাড়ির মা-বোনেরাই বেশি যুক্ত। বিড়ি বাঁধার কাজে এলাকার মেয়েদের হাতেখড়ি হয় মা-ঠাকুরমাদের কাছেই। কেউ বিবাহসূত্রে এলাকায় এলে তাঁরও এই পেশায় যোগ দিতে বিশেষ সময় লাগে না বলে জানান বাসিন্দারা।

কী ভাবে টাকা রোজগার হয় এই পেশা থেকে? প্রশ্ন শুনেই সুতোর লাটাইতে খানিক টান মেরে শেফালি বিবি জানান, সাধারণত গ্রামের মহাজনদের কাছ থেকেই মেলে বিড়ির মশলা, তামাক, সুতো, কেন্দু পাতা। এক হাজার বিড়ি বাঁধলে মেলে একশো টাকা। মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকে মায়ের হাত ধরে এই পেশায় প্রবেশ করেছিলেন জায়েদা বেগম, সালমা খাতুনরা। তাঁরা জানান, কাজে কোনও খামতি নেই, কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে মিলছে মজুরি। অবস্থা এমনই যে, কখনও ১০ দিনের মজুরি একসঙ্গে মিলছে, কখনও বা তিন দিন ধরে কোনও মজুরিই মিলছে না।

Advertisement

কেন এমন অবস্থা? কারিগরপাড়ার শেফালি বিবি, দুরুনি বিবি, মসুদা বিবিরা জানান, খুচরো ১০০, ১৫০ টাকা মহাজনরা রোজ দিতে পারছেন না। বলছেন খুচরো নেই। বদলে ৫০০-র নোট দিলে তা নিতে অস্বীকার করছেন বিড়ি শ্রমিকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘কোথায় ভাঙাব টাকা! ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টই নেই যে। ডাকঘরেও অনেকের অ্যাকাউন্ট নেই।’’ অনেকে আবার অচল নোটের খবরটা পেয়েছেন বেশ পরে। তাই আগেভাগে কোনও ব্যবস্থাই করতে পারেননি।

শুধু এই এলাকার বাসিন্দারাই নন। গুসকরা ও ভাতার থেকেও অনেকে বিড়ি বাঁধতে আসেন মঙ্গলকোটে। তাঁদেরও একই হাল। কাশ্মীরা খাতুন, সায়েদা বিবিরা বলেন, ‘‘এখন যা হাল, তাতে প্রতি দিনের রাহা খরচটা জোগাড় করাটাই ভীষণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’’

এই পেশায় সমস্যা যে চলছে, তা মালুম পড়ে মহাজনদের কথাতেও। আলতাফ আনসারি, ডাবুল আনসারিরা বলেন, ‘‘আমরা নর্জা ও কামনাড়ার দোকানে বিড়ি জোগান দিই। দোকানদাররা আমাদের ৫০০, হাজারের নোট দিচ্ছেন। আমরা কোথা থেকে এত খুচরো টাকা পাব?’’ এই পরিস্থিতিতে সমস্যা আরও বেড়েছে সুতো, বিড়ির মশলার দাম বেড়ে যাওয়ায়।

এই পরিস্থিতিতে সংসার সামলাতেও বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান মেয়েরা। তাঁদেরই এক জন আক্ষেপ করেন, ‘‘আর মাস খানেক পরেই ছেলেটা নতুন ক্লাসে উঠবে। ছেলেকে একটা নতুন ক্লাসে একটা স্কুল ব্যাগ কিনে দেব বলে টাকা জমাচ্ছিলাম। তা আর হবে কি না জানি না। বই-খাতা জোগাড় করতেই তো সব শেষ হয়ে যাবে।’’

আক্ষেপ করলেও হাতের লাটাইটা অবশ্য থামছে না— হয়তো ঘরের মানুষগুলোর জন্য...।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন