দুর্গাপুরে কুকুর-উৎপাত

মাংস খুবলে নিল কুকুর, মৃত্যু শিশুর

ডিপিএল কলোনির এ-জোনে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ডিপিএলের কোকআভেন বিভাগের কর্মী অমল বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুতুলদেবী। তাঁরা জানান, গত ২৫ জানুয়ারি আবাসনের সামনে ফাঁকা জায়গায় খেলছিল স্মৃতি।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:০২
Share:

কুকুরের উপদ্রব। (ইনসেটে) মৃত শিশু, স্মৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনেই খেলছিল ছ’বছরের এক শিশুকন্যা। আচমকা এক কুকুরের কামড়। খুবলে নেয়, শিশুটির ডান গালের মাংস। কিছু দিন পরে স্মৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় নামে দুর্গাপুরের ওই শিশুটির মৃত্যু হয়। শহরবাসীর অভিযোগ, কুকুরের উৎপাত দুর্গাপুরে দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে। অভিযোগ, এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পরেও কুকুর ধরতে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায়নি দুর্গাপুর পুরসভাকে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিপিএল কলোনির এ-জোনে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ডিপিএলের কোকআভেন বিভাগের কর্মী অমল বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুতুলদেবী। তাঁরা জানান, গত ২৫ জানুয়ারি আবাসনের সামনে ফাঁকা জায়গায় খেলছিল স্মৃতি। আচমকা একটি কুকুর কামড় দেয়। বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয় স্মৃতিকে। কিন্তু ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে আচমকা প্রবল জ্বর আসে তার। ওই বেসরকারি হাসপাতালেই ভর্তি করানো হয় স্মৃতিকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি জ্ঞান হারালে স্মৃতিকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায় বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে। শিশুটির অবস্থা সঙ্কটজনক দেখে তাকে ফুলবাগানের বিসি রায় শিশু হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। সেখানেই ২২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় শিশুর। স্মৃতির মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে তিন দিন। রবিবার ঘরে বসেই বাবা-মা আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘এ ভাবে কুকুরের কামড়ে মেয়েকে হারাতে হবে, বিশ্বাস করতে পারছি না।’’ শিশুটির জেঠু সমরবাবু জানান, ১১ ফেব্রুয়ারি স্মৃতির জন্মদিনও পালন করা হয় বাড়িতে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কুকুরের কামড়ের জেরে ‘এনসেফালোপ্যাথি’-তে আক্রান্ত হয় শিশুটি।

এমন মর্মান্তিক ঘটনার কথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা এবং দুর্গাপুরবাসী। তবে সেই সঙ্গে তাঁদের ক্ষোভ, কুকুরের উৎপাত বন্ধে কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অতীতেও এই ডিপিএল কলোনিতেই কুকুরের কামড়ে বেশ কয়েক জন জখম হয়েছিলেন। কলোনির বি-জোনে থাকেন ডিপিএল-এর আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘পুরসভা কুকুর ধরতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। আমরা সবাই আতঙ্কে রয়েছি।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু এই কলোনিই নয়, শহরের নানা জায়গাতেও চলছে কুকুরের উৎপাত। এমনকী, চলন্ত গাড়ির সামনে আচমকা কুকুর এসে প়়ড়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা। ‘পরিস্থিতি সত্যিই ভয়াবহ’, দাবি কুকুরদের নির্বীজকরণের কাজে যুক্ত পানাগড়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক তথা ‘অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অফ ইন্ডিয়া’র অন্যতম আধিকারিক চন্দন গুঁই। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গাপুর শহরে এখন রাস্তার কুকুরের সংখ্যা ২৮ হাজারেরও বেশি। বংশবিস্তার রোধ করতে না পারলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে। স্বাভাবিক ভাবেই অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই কুকুরদের মধ্যে এমন হিংস্র প্রবণতা বাড়বে। নির্বীজকরণের পরে জলাতঙ্কের টিকা দেওয়াটাও জরুরি।’’

যদিও পুরসভার দাবি, তাদের উদ্যোগে কুকুরের নির্বীজকরণ (অ্যানিমাল বার্থ কন্ট্রোল বা এবিসি) প্রকল্প ধারাবাহিক ভাবে শহরে চালু রয়েছে। মাঝেসাঝে তাতে নানা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানও হাত বাড়িয়ে দেয়। ঠিক পদ্ধতি মেনে একটি কুকুরের নির্বীজকরণের জন্য গড়ে প্রায় ১৩০০ টাকা খরচ পড়ে। বছরে গড়ে হাজারের বেশি কুকুরের নির্বীজকরণ করা হয়। কিন্তু অর্থের অভাবে এর থেকে বেশি করা যায় না বলেই জানা গিয়েছে। পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘শহরের সব রাস্তার কুকুরকে নির্বীজকরণ করতে বহু টাকা দরকার। পুরসভার একার পক্ষে তা জোগাড় করা কঠিন। কুকুরের উপদ্রব রুখতে তবুও সাধ্যমতো চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন