Durga Puja 2020

প্রতিমা তৈরি করে সংসারের সুরাহা

সংসার সামলিয়েই প্রতি দিন প্রতিমা তৈরি করেন। তাঁর তৈরি প্রতিমা মানকর, বুদবুদ, পানাগড়, গলসি, খানা-সহ বিভিন্ন এলাকার পুজো মণ্ডপে শোভা পায়।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

বুদবুদ শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩৭
Share:

প্রতিমা-শিল্পী সোমা মণ্ডল। মানকরে। নিজস্ব চিত্র।

সকালে রান্না, বাড়ির কাজ। তার পরে খানিক ‘ফাঁকা সময়’। কিন্তু বুদবুদের মানকরের সোমা মণ্ডলের জন্য সেটা অবসরের সময় নয়। ওই সময়েই তিনি প্রতি দিন প্রতিমা তৈরি করেন।

Advertisement

স্বামীর সূত্রেই সোমাদেবীর এই পেশায় আসা। বুদবুদের মানকরের মৃৎশিল্পী উজ্জ্বল মণ্ডলের সঙ্গে ২০০০ সালে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের আগে উজ্জ্বলবাবুকে কাজে সাহায্যের জন্য সহযোগী শিল্পী রাখতে হত। তার জন্য দিতে হত পারিশ্রমিকও। কিন্তু বিয়ের পরে সোমাদেবীই ‘সহযোগী শিল্পী’র ভূমিকা নিতে শুরু করেন। তিনিই বলেন, ‘‘বিয়ে হওয়ার পরে দেখতাম স্বামী বছরভর প্রতিমা তৈরি করছেন। ভীষণ ব্যস্ত থাকতেন। তাই মনে হল, আমিও এই কাজে হাত দিই।’’

এই ভাবনা থেকেই স্বামীর কাছেই ধীরে-ধীরে কাজ শিখে নেন সোমাদেবী। তবে, সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে শুধু সহযোগিতা নয়, বছর দু’য়েক আগে পূর্ণাঙ্গ মূর্তি তৈরিও শিখে ফেলেন তিনি। সোমাদেবীর কথায়, ‘‘কোনও দিন প্রতিমা তৈরি করিনি। তবে স্বামী উৎসাহ দিতেন। সেই শুরু।’’— এ বছর, স্বামীর সঙ্গে সোমাদেবী ১৩টি দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সেগুলি চলে যাবে বিভিন্ন মণ্ডপে। ফলে, এই মুহূর্তে চূড়ান্ত ব্যস্ততা এই শিল্পী দম্পতির জীবনে। উজ্জ্বলবাবু জানান, স্ত্রী পাশে দাঁড়ানোয় আগের থেকে বরাতও অনেক বেশি নিতে পারছেন। তিনি বলেন, ‘‘আগে একা হাতে সাত-আটটা প্রতিমা তৈরি করতাম। এখন গড়ে ১৩-১৪টি প্রতিমার বরাত নিতে পারি। সংসারেরও সুরাহা হয়েছে।’’

Advertisement

তবে, দুর্গার থেকে কালী প্রতিমা বেশি তৈরি করেন এই দম্পতি। সোমাদেবী জানান, স্বামীর সঙ্গে বছরে ৪০টিরও বেশি কালী প্রতিমা তৈরি করেন। তাঁর তৈরি প্রতিমা মানকর, বুদবুদ, পানাগড়, গলসি, খানা-সহ বিভিন্ন এলাকার পুজো মণ্ডপে শোভা পায়।

যদিও, এ বার করোনা-পরিস্থিতিতে রোজগার খানিকটা কমেছে বলে জানান এই মৃৎশিল্পী। সোমাদেবী জানান, এ বার বরাত অনুযায়ী, মূর্তির আকার আগের থেকে ছোট হয়ে গিয়েছে। দর মিলছে, ১০ হাজার টাকার আশপাশে। অন্য বছর, আকারে বড় প্রতিমা প্রায় ১৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন সোমাদেবী। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এ বার মূর্তি তৈরির উপকরণের দামও কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে, রোজগারঅনেকটাই কমেছে।’’এই শিল্পী দম্পতির পরিবারের রয়েছেন, দুই মেয়ে বিদিশা ও অন্বেষা এবং এক ছেলে সৌরসা। বড় মেয়ে, কলেজ পড়ুয়া বিদিশা বলেন, ‘‘মায়ের এই কাজের জন্য আমাদের খুবই গর্ব হয়। কোনও দিন কষ্ট কী জিনিস, তা বুঝতে দেয়নি মা।’’ প্রতিমায় সাজ পরাতে ব্যস্ত সোমাদেবী জানান, নিজে কিছু করার ইচ্ছে তো বটেই। পাশাপাশি, ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়েই তাঁর এই শিল্প-কর্ম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন