বাজনা ভাড়াতেও ভাই-ভাই

কোথাও বাজনাদার না পেয়ে তাঁরা যখন দিশাহারা, এগিয়ে এলেন গ্রামের পুজো কমিটির লোকজন। বিসর্জনের জন্য আগে থেকে ভাড়া করা বাজনাদার মহরমের জন্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা।

Advertisement

প্রদীপ মুখোপাধ্যায় ও বিপ্লব ভট্টাচার্য

ভাতার ও কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩২
Share:

একসঙ্গে: মণ্ডপ সাফাইয়ে হাত লাগিয়েছেন সকলেই। নিজস্ব চিত্র

মিছিলের জন্য বাজনাদার বায়না করতে গিয়ে মাথায় হাত পড়েছিল মহরম কমিটির। দুর্গাপুজোর জন্য আগেই তা ভাড়া হয়ে গিয়েছে। কোথাও বাজনাদার না পেয়ে তাঁরা যখন দিশাহারা, এগিয়ে এলেন গ্রামের পুজো কমিটির লোকজন। বিসর্জনের জন্য আগে থেকে ভাড়া করা বাজনাদার মহরমের জন্য ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা।

Advertisement

বিসর্জন ও মহরমের মিছিল নিয়ে রাজ্যে যখন চাপান-উতোর, তারই মাঝে এমন সম্প্রীতির বার্তা দিলেন পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার এরুয়ার গ্রামের পুজো ও মহরম কমিটি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এরুয়ারের কাজীপাড়া থেকে প্রতি বছরই বাজনা-সহ তাজিয়া নিয়ে মিছিল বেরোয়। এ বছর পুজো এবং মহরম এক সময়ে পড়ে যাওয়ায় বাজনাদারের চাহিদা তুঙ্গে উঠেছে। গ্রামের মহরম কমিটির সদস্য শেখ মুজিবর, শেখ টগররা জানান, ‘‘কোথাও বাজনা পাচ্ছিলাম না। গ্রামের হরগৌরী পুজোর উদ্যোক্তাদের কানে সেই খবর পৌঁছয়। তখন ওঁরাই আমাদের নিজেদের বায়না করা বাজনা দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমাদের খুব উপকার হল।’’

পুজো কমিটির তরফে কৃষ্ণপদ সাহা জানান, পুজোয় ঘট আনা থেকে বিসর্জন, সবেতেই এক সঙ্গে পা মেলান দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন। মণ্ডপ তৈরি, প্রতিমা আনায় সাহায্য করেন রবিউল মল্লিক, শেখ তনবীররা। তিনি বলেন, ‘‘তাই যখন শুনলাম, মহরমের মিছিলের জন্য ওঁরা বাজনা পাচ্ছেন না, আমাদের বায়না করা বাজনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’ তিনি জানান, বিসর্জনে ঢাক দিয়ে সহযোগিতার কথা জানিয়েছে মহরম কমিটি। পুজো কমিটির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ভাতারের বিডিও শুভ্র সরকার। মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর উত্তর) পুষ্পেন্দু সরকার বলেন, ‘‘এমন সম্প্রীতির ছবিই তো কাম্য।’’

Advertisement

পুজোয় সামিল হয়ে বিভেদ ভোলার ডাক দিচ্ছেন পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার অযোধ্যা গ্রামের আলাম আজিম, সৈয়দ খইজুদ্দিনেরাও। এই গ্রামের ঘটকবাড়ির পুজোতেও সম্প্রীতির ছবি। নবমীর দিন সেখানে পাষাণচণ্ডীর পুজো হয়। প্রতি বছর সেখানে সামিল হন সাতকাহনিয়া গ্রামের সৈয়দ হোসনে জামালরা। তিনি বলেন, ‘‘এই দিনটার জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি। প্রসাদ নিয়ে বাড়ি ফিরি সকলে।’’ বাড়ির সদস্য হরিচরণ ঘটকের কথায়, ‘‘পুজোয় যে ছবি এখানে দেখা যায়, গোটা সমাজের জন্যই এখন তা খুব জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন