—প্রতীকী চিত্র।
জুলাই ২০১৬-র পরে জুলাই ২০১৭। ক্লাসঘরে মোবাইলের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশিকা আসে বারবার। কিন্তু, তার পরেও পূর্ব ও পশ্চিম, দুই বর্ধমানেই নানা স্কুলের ক্লাসে ঢুঁ মারলে দেখা যাচ্ছে নিয়ম ভাঙার ছবি। বিভিন্ন স্কুল সূত্রে খবর, প্রায়শই দেখা যায়, ক্লাসের মধ্যেই কখনও পড়ুয়ারা মোবাইলে ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে’ মজে। কখনও আবার একই প্রবণতা দেখা যায় শিক্ষকদের একাংশের মধ্যেও। এই সমস্যার সমাধানে এ বার প্রধান শিক্ষকদের নজরদারি চালানোর পরামর্শ দিল শিক্ষা দফতর।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা শিক্ষা মনিটরিং কমিটি গত বছর জুলাই মাসে অবিভক্ত বর্ধমান জেলার প্রায় চারশোটি স্কুল পরিদর্শন করে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিল। সেই রিপোর্টে বেশ কিছু অনিয়মের ছবি উঠে আসে। যেমন, মেমারির একটি স্কুলে দেখা যায়, ক্লাস চলাকালীন শিক্ষক মোবাইলে ‘গেম’ খেলতে ব্যস্ত। ওই এলাকারই অন্য একটি স্কুলে গিয়ে আবার পরিদর্শকেরা দেখেন, শিক্ষক মোবাইলে কথা বলছেন আর পড়ুয়ারা নিজেদের মধ্যে আড্ডায় ব্যস্ত।
ওই রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সাবেক বর্ধমানের জেলা শিক্ষা মনিটরিং কমিটির বৈঠকে তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন ক্লাসে মোবাইল বন্ধের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে জানানো হয়, শিক্ষকেরা স্কুলে মোবাইল আনলেও তা যেন স্টাউরুমে রেখে ক্লাসে যান। স্কুলে স্কুলে সেই নির্দেশিকাও পাঠানো হয়।
কিন্তু বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই নির্দেশিকায় কাজ যে বিশেষ হয়নি, তা চলতি মাসে জেলা শিক্ষা দফতরের দেওয়া আরও একটি নির্দেশিকাই তার প্রমাণ। সম্প্রতি শিক্ষা দফতর ফের নির্দেশিকা জারি করে ক্লাসঘরে মোবাইলের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয়, ওই নির্দেশিকায় পড়ুয়ারা যাতে কোনও ভাবেই স্কুলে মোবাইল ব্যবহার না করতে পারে, সে বিষয়েও বলা হয়েছে।
শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, ক্লাস ঘরে শিক্ষকেরা মোবাইল ব্যবহার করলে তার প্রভাব পড়ুয়াদের উপরেও প়়ড়ছে। অনেক সময় এমনও দেখা যাচ্ছে, ব্ল্যাকবোর্ডে জটিল অঙ্কের মারপ্যাঁচ বোঝাচ্ছেন শিক্ষক। কিন্তু সে দিকে মন না দিয়ে ছাত্র মজে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে।
কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের একাংশের আশঙ্কা, এই নির্দেশিকাতেও কাজ হবে কি না। তবে জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) খগেন্দ্রনাথ রায় জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা নজরদারি চালিয়ে ফি মাসে জেলা শিক্ষা দফতরে রিপোর্ট পাঠাবেন। পড়ুয়া বা অভিভাবকরাও মোবাইল সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ থাকলে তা গোপনে প্রধান শিক্ষককে জানাতে পারেন। প্রধান শিক্ষকের রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলে আশ্বাস জেলা শিক্ষা দফতরের।
রামকৃষ্ণপল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা বক্সী বলেন, ‘‘মোবাইল ব্যবহারে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হয়।’’