আজ বিশ্ব জল দিবস

বেহিসাবি পাম্পে বিপদ বৃদ্ধি ভূগর্ভের

 দরজায় বিপদ কড়া নাড়লেও এই সব ব্লকগুলিতে চাষের প্রয়োজনে মাটির তলার জল ব্যবহারের প্রবণতা কমেনি। আংশিক সঙ্কটজনক এলাকায় নতুন করে সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর অনুমতি মেলে না।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০১:১৫
Share:

বোরো চাষের জন্য সাবমার্সিবল পাম্পে জল তোলা হচ্ছে কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

চাষের জন্য দেদার তোলা হচ্ছে ভূগর্ভের জল। সেই জল অপচয়ও হচ্ছে যথেচ্ছ। এ ভাবে জল অপচয়ের ফল ভুগতে হবে ভবিষ্যতে, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের হিসাবে, প্রতি বছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় জলস্তর নামছে। অথচ, চাষের জন্য বিপুল পরিমাণে মাটির তলা থেকে জল তোলা হচ্ছে। জেলায় বোরো ধান চাষের জন্য সব থেকে বেশি ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করেন চাষিরা। এখন জেলার ১১টি ব্লক আংশিক সংঙ্কটজনক হিসাবে চিহ্নিত। ভাতার, কালনা ২, কাটোয়া ১ ও ২, কেতুগ্রাম ১ ও ২, মেমারি ২, মঙ্গলকোট, মন্তেশ্বর, রায়না ১ ও ২ ব্লক রয়েছে সেই তালিকায়। ইতিমধ্যে আর্সেনিক মানচিত্রে ঠাই পেয়েছে এ জেলা। পূর্বস্থলী ১, ২ কাটোয়া ১, ২ ও কালনা ২ ব্লকের বেশ কিছু এলাকার জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।

দরজায় বিপদ কড়া নাড়লেও এই সব ব্লকগুলিতে চাষের প্রয়োজনে মাটির তলার জল ব্যবহারের প্রবণতা কমেনি। আংশিক সঙ্কটজনক এলাকায় নতুন করে সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর অনুমতি মেলে না। তবে মন্তেশ্বরের এক জন প্রতিনিধির কথায়, ‘‘আইনের ফাঁক গলে ব্লকে গত দু’বছরে চাষের জন্য বসানো হয়েছে অন্তত ২০টি সাবমার্সিবল।’’ কৃষি দফতরের দাবি, মাটির তলা থেকে চাষিরা যে পরিমাণে জল তোলেন তার অনেকটাই অপচয় করেন। বেশির ভাগ চাষিরই কোন চাষে জমিতে কতটা জলের প্রয়োজন, সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা নেই। ধান চাষে গাছের অধিকাংশ ডুবিয়ে সেচ দিতে গিয়ে জল অপচয় হয় অনেকটাই। এছাড়া কাঁচা নালার মাধ্যমে দূরের জমিতে সেচের জল পাঠাতে গিয়ে অনেক অপচয় হয়। মন্তেশ্বরের ধান চাষি গোলাম শেখ, মেমারির আলু চাষি প্রবীর ঘোষালদের বক্তব্য, ‘‘দরকার হলে জমি ভর্তি করে জল দিতে হয়, এটাই বাপ-ঠাকুরদার কাছে শিখে এসেছি।’’

Advertisement

অল্প জলে ধান চাষে শ্রী পদ্ধতি নিয়ে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জেলায় প্রদর্শনী ক্ষেত্র করে চলেছে কৃষি দফতর। যদিও এই পদ্ধতি নিয়ে চাষিদের তেমন আগ্রহ বাড়েনি বলে অভিযোগ। পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকে আর্সেনিকোসিস রোগে মৃত্যু হয়েছে অনেকের। এখনও অনেকে ভুগছেন এই রোগে। দুই ব্লকে মাটির তলার জল বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে বিপদ ডেকে আনা হয়। অথচ, দুই ব্লকে সারা বছর বিপুল আনাজ উৎপাদন হয় মাটির তলার জলেই। ধান ছাড়া অন্য চাষে বিন্দু সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্দিষ্ট জল দেওয়া যায় জমিতে। অথচ, বেশির ভাগ চাষির সে নিয়ে ধারণাই নেই বলে কৃষিকর্তাদের দাবি।

কেন্দ্রীয় ভূমি ও জল বোর্ডের (পূর্ব ক্ষেত্র) এক বিশষজ্ঞের কথায়, ‘‘পূর্বস্থলী থেকে কাটোয়া পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় আমাদের সমীক্ষায় মাটির তলার জলে শুধু আর্সেনিক নয়, ক্ষতিকারক ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়ামের মতো ধাতুও মিলেছিল। যথেচ্ছ পরিমাণে মাটির তলা থেকে জল তুলে নেওয়ায় এমন সমস্যা।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘মাটির উপরিভাগে যাতে জল জমিয়ে চাষে ব্যবহার করা হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প এবং একশো দিনের কাজে প্রচুর পুকুর কাটা হয়েছে।’’ জেলা প্রশাসনের দাবি, শুধু ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্পে জেলায় তৈরি করা হয়েছে ৩২ হাজার পুকুর। এর মধ্যে কালনাতেই হয়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার। জেলার এক সহ কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ জানান, চাষিদের সঙ্গে অল্প জলে চাষের পদ্ধতি নিয়ে নানা আলোচনা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন