দেখভাল: মায়ের সঙ্গে অন্তিমকুমার। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।
জন্ম থেকেই ছেলে প্রতিবন্ধী এবং মূক-বধির। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের তাই এখন একটাই চিন্তা, তাঁদের অবর্তমানে ছেলের কী হবে! এমন ভাবনা থেকেই প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরিতে জমি দান ও অর্থসাহায্য করতে চান পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার অধিকারী দম্পতি। সে জন্য দু’দফায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা ।
জামুড়িয়ার হেভিমোড়ের বাসিন্দা ৭১ বছরের হরপ্রসাদ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী ৬৬ বছরের জবাদেবীর তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েরা বিবাহিতা। বড় ছেলে অন্যত্র থাকেন। দম্পতির সঙ্গে থাকেন মেজো ছেলে অন্তিমকুমার ও ছোট ছেলে সর্বেশ্বর। ৩৯ বছরের অন্তিম জন্ম থেকেই দাঁড়াতে পারেন না। তাঁর দেখভালের সব দায়িত্ব রয়েছে বাবা-মা এবং ছোট ভাইয়ের উপরে। তবে সর্বেশ্বরেরও এক চোখে দৃষ্টি নেই।
দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী হরপ্রসাদবাবুর পেনশন মাসে ১,১৪৪ টাকা। তার সঙ্গে নিজের ছোট মুদির দোকানের সামান্য আয়ে সংসার চলে। বৃদ্ধের বক্তব্য, ‘‘আমরা যখন থাকব না, অন্য ছেলে বা মেয়েরা যদি কোনও কারণে অন্তিমকে দেখতে না পারে— কী হবে! সর্বেশ্বরের রোজগার নেই। এ জন্যই প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভাবনা মাথায় আসে।’’
আরও পড়ুন:শিশু-মৃত্যুতে ৩০ লক্ষ জরিমানা অ্যাপোলোর
এই ভাবনা থেকেই ২০১১-র ১৭ জুন তাঁরা প্রথম বার রাষ্ট্রপতি (প্রতিভা পাটিল), প্রধানমন্ত্রী (মনমোহন সিংহ) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে চিঠি পাঠান। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর অধিকারী দম্পতিকে সাবেক বর্ধমানের জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে বলে। ২০১২-য় জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করলেও কাজ হয়নি। তাই মাস দুয়েক আগে ফের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে হরপ্রসাদবাবুরা লিখেছেন, কেন্দ্র গড়ার জন্য দেড় বিঘা জমি (যার বাজারদর প্রায় ১০ লক্ষ টাকা) ও সঞ্চিত অর্থের কিছুটা দান করবেন।
জবাদেবী বলেন, ‘‘সরকার পুনর্বাসনকেন্দ্র গড়লে প্রতিবন্ধী সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক বাবা-মা-র দুশ্চিন্তা ঘুচবে।’’ পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠির আশ্বাস, ‘‘ওই দম্পতি চিঠিগুলির প্রতিলিপি নিয়ে আমার কাছে এলে, কার্যকরী ব্যবস্থা নেব।’’