চার বছর পার, বিচার চান দম্পতি

গভীর রাতে তরুণীর বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন যুবক। পাঁচিল টপকে সটান উঠে গিয়েছিলেন দোতলায় মেয়েটির ঘরে। তাঁর সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে তখনই, দাবি করেন বছর বত্রিশের ছেলেটি। রাজি হননি তরুণী। সে নিয়ে বচসা, ধস্তাধস্তি।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

নিগনের বাড়িতে ছেলের ছবি হাতে বৃদ্ধ বাবা-মা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

গভীর রাতে তরুণীর বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন যুবক। পাঁচিল টপকে সটান উঠে গিয়েছিলেন দোতলায় মেয়েটির ঘরে। তাঁর সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে তখনই, দাবি করেন বছর বত্রিশের ছেলেটি। রাজি হননি তরুণী। সে নিয়ে বচসা, ধস্তাধস্তি। আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে তরুণীর বাবা উঠে আসতেই রিভলবার বের করে গুলি চালিয়ে দেন যুবক। মৃত্যু হয় প্রৌঢ়ের।

Advertisement

২০১২ সালের ১২ মে রাতে মঙ্গলকোটের ইট্যা গ্রামে অনুপ সিংহরায় নামে ওই যুবককে এই খুনের অভিযোগে বাড়ির মধ্যেই আটকে হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। তার পরে মারধর। ভোরে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় তাঁরও। চার বছর আগের এই ঘটনায় খুন-পাল্টা খুনের অভিযোগ দায়ের করেছিল ওই তরুণী ও অনুপ, দু’জনের পরিবারই। পিটিয়ে খুনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে কাটোয়া আদালতে। গোটা ঘটনা নিয়ে এখন আর কোনও কথা বলতে রাজি নন তরুণীর পরিবার। কিন্তু ছেলেকে যারা খুন করেছে, তাদের শাস্তি চান অনুপের বৃদ্ধ বাবা-মা।

ঘটনার পরে পুলিশ দাবি করেছিল, এর পিছনে রয়েছে প্রণয়ঘটিত কারণ। নিগনের বাসিন্দা অনুপের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ঘটনার মাস কয়েক আগে থেকে মোবাইল ফোন সংস্থার কর্মী অনুপকে মেয়েটি এড়িয়ে চলছিলেন বলে অভিযোগ। তারই হেস্তনেস্ত করতে সেই রাতে নিগন থেকে মোটরবাইকে ইট্যা গ্রামে পৌঁছে যান অনুপ। ঘরে কথা কাটাকাটির সময়ে বারান্দায় শুয়ে থাকা তরুণীর বাবার ঘুম ভেঙে যায়। অভিযোগ, তিনি ঘরে ঢুকতেই অনুপ তাঁর বুকে গুলি করেন। মেয়েটির হাতেও গুলি লাগে। আর সেই আওয়াজেই ঘুম ভেঙে যায় আশপাশের লোকজনের। অনুপকে বেঁধে মারধর শুরু হয়।

Advertisement

তরুণীর পরিবার অবশ্য ঘটনার পরে অনুপের সঙ্গে মেয়ের কোনও সম্পর্কের কথা মানতে চায়নি। বরং, অনুপ রাস্তাঘাটে মেয়েকে বিরক্ত করতেন বলে দাবি করে তারা। নিগনের মাঝেরপাড়ার বাড়িতে বসে অনুপের বাবা-মা রঞ্জিতবাবু ও কল্পনাদেবী অবশ্য অভিযোগ করেন, ‘‘মেয়েটির সঙ্গে আমার ছেলের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল। বাড়িতেও যাতায়াত ছিল।’’ সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে তাঁরা জানান, অন্য দিনের মতোই পাশের ছোট বাড়িতে ঘুমোতে গিয়েছিলেন ছেলে। তাঁরা ছিলেন একচিলতে মাটির বাড়িতে। পরের দিন সকালে পুলিশ এসে ছেলের খোঁজ করে। ছেলেকে ফোন করে তাঁরা দেখেন, ফোন বন্ধ। তার পরেই অনুপের কাকা সত্যজিৎবাবু কৈচর ফাঁড়িতে যান। সেখানে প্রথমে তাঁকে জানানো হয়, অনুপ খুন করেছেন। পরে জানানো হয়, মৃত্যু হয়েছে অনুপেরও। তার পরেই ইট্যা গ্রামে গিয়ে তাঁরা দেখেন, ছেলের হাত-পা বাঁধা দেহ পড়ে রয়েছে।

পুলিশের কাছে বাবাকে খুনের অভিযোগ করেছিলেন মেয়েটির দাদা। ছেলেকে পিটিয়ে খুনের পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন অনুপের বাবা রঞ্জিতবাবু। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রিভলবার, কার্তুজ, একটি ব্যাগ, রক্তমাখা মাটি, নাইলনের দড়ি উদ্ধার করে। সেই বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ কাটোয়া আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। তাতে পিটিয়ে খুনের মামলায় ওই তরুণী, তাঁর মা, দাদা ও কাকাকে অভিযুক্ত করা হয়। তার আগে অবশ্য মেয়েটির দাদা ও কাকাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তাঁরা জামিন পান। তরুণী ও তাঁর মা আগাম জামিন নেন। ২০১৪-র ১৭ ডিসেম্বর থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত অনুপের বাবা ও এক দাদার সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

পিটিয়ে খুনের মামলায় অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রসেনজিৎ সাহা দাবি করেন, ‘‘অনুপের পরিবার প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ মামলাটি সাজিয়ে খুনের ধারা দিয়েছে। মেয়েটির পরিবার নির্দোষ। ওঁরাই তো বাবাকে হারালেন।’’ তরুণীর মা শুধু বলেন, ‘‘বিচার ব্যবস্থার উপরে আমাদের আস্থা রয়েছে।’’ অনুপের বাবা-মায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। দোষীদের শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন